সিবিএন ডেস্ক ;

ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারে উপচে পড়েছে পর্যটকদের ভিড়। ঈদের দিন থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র চার দিনে প্রায় চার লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।

ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কেউ রোদ, কেউবা ঝুম বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নেমে পড়েছেন উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে। সৈকতের কলাতলী থেকে শুরু করে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতিদিন দুপুরের পর দেখা গেছে লাখো মানুষের ভিড়। কেউ মেতেছেন সমুদ্রস্নানে, কেউ ছবি তোলায়, আবার কেউ বালুচরে খেলায়।

এই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্যেও ঘটেছে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা। গত দুই দিনে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে সাগরে গোসলে নামেন রাজশাহীর শাহীনুর রহমান (৬০) ও তার ছেলে সিফাত (২০)। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গিয়ে তারা নিখোঁজ হন। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে রবিবার বিকেলে লাবণী পয়েন্টে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন চট্টগ্রাম শহরের ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা রাজীব আহম্মদ (৩৫)। তার মরদেহ আট ঘণ্টা পর মধ্যরাতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট এলাকায় ভেসে আসে। একই দিন সকালে শৈবাল পয়েন্টে জাল নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন বাহারছড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরু। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় সোমবার সকালে বাঁকখালী নদীর মোহনা সংলগ্ন নাজিরারটেক এলাকা থেকে।

এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রশাসন। কক্সবাজার সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ টহল ও সাদা পোশাকের নজরদারি। লাইফ গার্ড কর্মীরাও পর্যটকদের নিরাপত্তায় টাওয়ার, বালিয়াড়ি ও পানিতে সক্রিয় রয়েছেন।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, ঈদের প্রথম দিনে পর্যটকদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিন থেকে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর ৫০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে যায়। সোমবার থেকে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে, যা রবিবার পর্যন্ত থাকবে বলে তিনি জানান। তার ভাষায়, গত চার দিনে অন্তত চার লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন এবং পরবর্তী চার দিনেও আরও চার লাখের মতো পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

পর্যটকদের অভিযোগ ও হয়রানি রোধে মোবাইল টিম মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি।

সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি পর্যটকরা ভিড় করছেন কক্সবাজারের অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানে—মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী-পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড, ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের প্রকৃতি, সাগর, রোদ-বৃষ্টি আর সৈকতের উচ্ছ্বাস এক অনন্য আনন্দ দিয়েছে। তবে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে কেউ কেউ নিরাপত্তা ও ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে কিছুটা অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন।

সতর্কতা হিসেবে সাগরের কয়েকটি পয়েন্টে গভীর গর্ত ও উল্টো স্রোত থাকায় লাইফ গার্ড কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের বারবার নির্দেশনা মানার অনুরোধ জানিয়েছে। তাদের মতে, সচেতন না হলে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তবে তারা সর্বাত্মক সতর্ক আছে।