আজিজুর রহমান রাজু, কক্সবাজার ;

জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে অনেকেই বিশ্রামের দিকে ঝুঁকেন। কিন্তু কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের চান্দুরপাড়া গ্রামের মাওলানা আব্দুল হালিম যেন সেই প্রচলিত ধারা থেকে ব্যতিক্রম। ৭৮ বছর বয়সে তিনি নিজ হাতে ক্যালিগ্রাফি করে সম্পন্ন করেছেন পবিত্র কোরআন শরিফের ত্রিশ পারা লেখা—যা নিঃসন্দেহে এক অনন্য সাধনা ও আত্মিক পরিপূর্ণতার প্রতীক।

দীর্ঘ ২ মাস ১৮ দিনের একাগ্র প্রচেষ্টায় সম্পন্ন এই কাজ শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ রচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি তার অটুট ধৈর্য, ঈমান এবং নিষ্ঠার জীবন্ত দৃষ্টান্ত।

পারিবারিক স্মৃতি থেকে জানা যায়, তাদের কাছে পূর্বপুরুষদের হাতে লেখা একটি কোরআন শরিফ ছিল, যা ১৯৬৫ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে হারিয়ে যায়। সেই শোকবহ স্মৃতি হৃদয়ে ধারণ করে আব্দুল হালিম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একদিন নিজেই লিখবেন পবিত্র কোরআন। বছর পেরিয়ে সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে।

স্থানীয়রা তাকে একজন জীবন্ত অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের ভাষায়, “তিনি শুধু আমাদের গ্রামের নয়, পুরো এলাকার গর্ব। শিশু থেকে প্রবীণ—সবাই তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়।”
আব্দুল হালিম তার হাতে লেখা কোরআনের প্রথম অনুলিপি বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনকে উপহার দিতে চান, যাতে তা জাতীয় স্বীকৃতি পায়।

আব্দুল হালিম জানান, একাডেমিক রেকর্ড অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৫৭ সালে, তবে প্রকৃত জন্ম ১৯৪৮ সালে। ১৯৬১ সালে ভারুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শুরু করে ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৭২ সালে ফাজিল (এইচএসসি সমমান) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন—প্রথমে ভারুয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে, পরে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ভারুয়াখালী দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে ২০১৬ সালে ৪০ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসর নেন।

অবসর জীবনেও তিনি থেমে থাকেননি। গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের পর ফজরের আগ পর্যন্ত নিজেকে নিবেদন করেন আরবি ক্যালিগ্রাফিতে। তার বাড়ির দেয়ালে টাঙানো নানা রঙে আঁকা আরবি লিপির সৌন্দর্য যেন আল্লাহপ্রেমের এক অনবদ্য শিল্পরূপ।

আব্দুল হালিম আজ প্রমাণ করেছেন—ইচ্ছাশক্তি, বিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের সামনে বয়স কোনো বাধা নয়। তার এই সাধনা ধর্ম ও শিল্পের এক অনন্য মেলবন্ধন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবে।