সিবিএন অনলাইন ডেস্ক

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য এক বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার এই আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ কি এই ধাক্কা সামলে রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে?

আন্দোলনের পটভূমি এবং সরকার পতন
আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ২০২৪ সালের ১ জুলাই। সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ ক্রমেই ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণজাগরণ এক পর্যায়ে সরকারকে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে। এই সময়ে অন্তত ৮৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটে, আহত হয় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা ভারতে পালিয়ে যান।

আল জাজিরার প্রতিবেদনের আলোকে বিভক্ত আওয়ামী লীগ
আল জাজিরা তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে, আওয়ামী লীগ বর্তমানে গভীর বিভাজনের মুখে। তৃণমূল এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে বড় ধরনের ফাঁক দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন, তারা দলীয় নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো আন্দোলনের জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে দায়ী করছেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য জনগণের মন থেকে দলের ব্যর্থতা আড়াল করতে পারছে না।

দলের পুনর্গঠনের বিষয়ে ঢাকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেন, “ছাত্র-নেতৃত্বাধীন রক্তক্ষয়ী আন্দোলন এবং সামরিক বাহিনীর সমর্থনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া দল পুনর্গঠন কঠিন হবে, তবে নেতৃত্বের সংকট ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন দলকে আরও দুর্বল করবে।”

তৃণমূলের অসন্তোষ এবং নেতৃত্ব সংকট
আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমূল কর্মী এখনো লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা আক্ষেপ করে বলছেন, দলীয় নেতারা শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন।

আল জাজিরা আরও জানিয়েছে, দলের তরুণ কর্মীদের অনেকেই এখন রাজনীতিতে ফিরে আসার ইচ্ছা হারিয়েছেন। এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলেছেন, “আমরা আর রাজনীতিতে ফিরতে চাই না। দল আমাদের ছেড়ে দিয়েছে।”

ক্ষমতার পথে ফিরতে কী দরকার?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফিরে আসা সহজ হবে না। ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য চারটি শর্ত দিয়েছেন:
১. ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া।
২. দলের বর্তমান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পরিত্যাগ করা।
৩. শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো।
৪. মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সকল নৃশংসতার বিচার নিশ্চিত করা।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
আওয়ামী লীগের জন্য সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতৃত্বের সংকট, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন। দলটি যদি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের রাজনৈতিক পুনরুত্থান আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

তবে আল জাজিরা বলেছে, অনেক নেতা এখনও শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখছেন এবং বিদেশ থেকে কর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। যদিও তৃণমূল কর্মীদের একাংশ এসব প্রচেষ্টায় আস্থা রাখতে পারছেন না।

আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ এখন দলীয় নেতৃত্ব এবং জনগণের আস্থার উপর নির্ভর করছে। আগামী নির্বাচন দলটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে। তবে নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক শক্তি ছাড়া, আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সোর্স: আল-জাজিরা