৬২১ খ্রিস্টাব্দের এক রজনীতে সংঘটিত মেরাজের ঘটনা ছিল নবীজী সা.-এর জন্য এক বিশেষ সান্ত্বনা এবং উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। মক্কায় কষ্টের বছর হিসেবে পরিচিত ‘আমুল হুজন’-এ নবীজী সা. একের পর এক দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত থাকাকালে আল্লাহ তায়ালা এই অলৌকিক ঘটনার আয়োজন করেন।
বিশেষ বাহন বোরাকে আরোহন করে নবীজী সা.-কে জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সকল নবী-রাসুল। নবীজী সা. তাঁদের ইমামতি করেন, যা তাঁর নবুওয়াতের সর্বোচ্চ মর্যাদার প্রকাশ ঘটায়।
নবীজী সা. প্রতিটি আকাশে পৌঁছালে সেখানকার ফেরেশতারা তাঁকে উষ্ণ অভিবাদন জানান। তাঁরা বলেন, “মারহাবান বিকা, ইয়া খাইরা খালকিল্লা”—আপনাকে স্বাগতম, হে আল্লাহর সৃষ্টির সেরা।
নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
১. প্রথম আকাশে নবীজীর সাক্ষাৎ হয় আদম আ.-এর সঙ্গে। তিনি জান্নাতী ও জাহান্নামী সন্তানদের দেখে আনন্দ ও কষ্ট অনুভব করেন।
২. দ্বিতীয় আকাশে নবীজী সা. সাক্ষাৎ করেন দুই খালাতো ভাই—হযরত ঈসা আ. ও ইয়াহইয়া আ.-এর সঙ্গে।
৩. তৃতীয় আকাশে হযরত ইউসুফ আ.-এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করে নবীজীকে।
৪. চতুর্থ আকাশে দেখা হয় হযরত ইদরীস আ.-এর সঙ্গে।
৫. ষষ্ঠ আকাশে হযরত মূসা আ. নবীজীর উম্মতের জান্নাতের অধিক সংখ্যার কথা ভেবে ক্রন্দন করেন।
৬. সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহিম আ.-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, যিনি বায়তুল মা‘মুরে ইবাদতে মগ্ন ছিলেন।
মালেক নামক ফেরেশতা নবীজী সা.-কে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। জাহান্নাম পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা নবীজীর জন্য গভীর বার্তা বহন করে।
মেরাজের এই ঘটনা নবীজী সা.-এর প্রতি ফেরেশতাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দার মর্যাদা স্পষ্ট করে। এটি আমাদের নবীজী সা.-এর সুন্নাহ মেনে চলতে ও তাঁকে জীবনের সর্বোচ্চ স্থানে রাখার শিক্ষা দেয়।
নবীজী সা. বলেন, হযরত ইবরাহিম আ. জান্নাতের পবিত্রতা ও মাটির সৌন্দর্য বর্ণনা করে উম্মতের জন্য সালাম জানিয়েছেন।
মেরাজের রাত শুধু অলৌকিক ঘটনা নয়, এটি মানবজাতির জন্য এক চিরন্তন দিকনির্দেশনা। নবীজী সা.-এর প্রতি আমাদের আনুগত্য ও ভালোবাসা আরও গভীর করার মাধ্যম এটি।
তিরমিজি (হাদিস: ৩১৩১), মুসনাদে আহমাদ (২/৫২৮), মুসলিম (হাদিস: ১৬৫), তিরমিজি (হাদিস: ৩৪৬২)।
