সিবিএন ডেক্স;

মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার। ডাকনাম ইয়াসিন,তবে বন্ধুমহলে সিকদার নামে বেশি পরিচিত। কক্সবাজার জেলায় উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে।বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার ও মা শিক্ষিকা।শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী কাজে উদ্বুদ্ধ করতে ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর আগেই নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন তার বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলে হাসিঘর ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।তিনি হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।”হাসিঘর ফাউন্ডেশন” হলো শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।যেখানে নেতৃত্ব স্থান থেকে শুরু করে সকল সদস্য স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বর্তমান শিক্ষার্থী।এবং সংগঠনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমেই হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

অসহায়ের মুখে হাসি ফুটাবো,স্লোগানকে বুকে ধারণ করে সমাজের অসহায়,সুবিধাবঞ্চিত,গরীব ও ভবঘুরে মানুষের জন্য কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চল উখিয়ায় ০৩-০৭-২০২১ সালে প্রতিষ্ঠালাভ করার পর থেকে উখিয়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে হাসিঘর ফাউন্ডেশন। উক্ত সংগঠনের মূল লক্ষ্যই হলো অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা।অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে মানবিক সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এই সংগঠন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়ে, বর্তমানে একটি উপজেলা শাখা (উখিয়া) সহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে শাখারয়েছে।যাতে করে শিক্ষার্থীরা সামাজিক,মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে এগিয়ে আসে। এই সংগঠনের সামাজিক মানবিক কাজের তালিকায় রয়েছে,গরীব রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান। করোনাকালে হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রম চোখে পড়ার মত ছিল,উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাস্ক এবং করোনা সচেতনতা লিফলেট বিতরণ, স্যানিটাইজারিং করা এবং করোনা টিকাদান কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা মানুষের মাঝে স্যানিটাইজার করা ও তাদের মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ,বাজারে ও মহল্লার মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাস্ক ও লিফলেট বিতরণ ও করোনায় ঘরবন্দি মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান ইত্যাদি।এবং শীতের মৌসুমে প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি চালানো হয়। প্রতি বছর শীত মৌসুমে ৫-৬ শতাধিক অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিতদের শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।এবং ঈদের সময় মহল্লার অসহায়,এতিম ও হেফজখানার শিশুদের ঈদবস্ত্র ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করা হয়।তাছাড়াও রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।তার সাথে রয়েছে বৃক্ষরোপণ।মেধাবী সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের চেয়ার,টেবিল ,বই,খাতা থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হয়।

তাছাড়াও নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজনে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী দ্বারা রক্ত দান,ও সংগঠনের ব্লাড সেলের সহায়তায় রক্তের ডোনার খুঁজে দেয়া হয়।হাসিঘর ফাউন্ডেশন যেকোনো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে ভূমিকা রেখে আসছে, ঘূর্ণিঝড় মোখায় উখিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০ নং মহাবিপদ সংকেতে মাইকিং করে এবং গাড়িতে করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়।সেইসাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন মানবসৃষ্ট দুর্যোগে হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে।তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শিশুদের মসজিদ ও নামাজ মুখি করতে নেয়া হয় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ,যে সমস্ত শিশুরা নিয়মিত মসজিদে এসে জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করে তাদের মেডেল ও পুরস্কারসামগ্রী দেয়া হয়। তাছাড়াও ইতিমধ্যে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসিঘর ফাউন্ডেশন আয়োজন করতে যাচ্ছে,বাংলাদেশ ভলানটিয়ার অলিম্পিয়াড।যার মূলমন্ত্র হলো ইন্সপিরিং ভলান্টিয়ারিজম এন্ড লিডারশিপ।হাসিঘর ফাউন্ডেশন মনে করে,এতে করে শিক্ষার্থীরা ভলান্টিয়ারিং এ উৎসাহী হবে এবং ভলান্টিয়ারিং সম্পর্কে আরো বিশেষ ভাবে অবগত হবে।বাংলাদেশ ভলানটিয়ার অলিম্পিয়াড ২০২৪ আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর আয়োজন করার চিন্তা করছে হাসিঘর ফাউন্ডেশন।

সংগঠনের সদস্য পি এম মোবারক, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে আসছে হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর সাথে তিনি উখিয়া শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য।তিনি বলেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মূলত হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর সাথে কাজ করা।হাসিঘর ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এবং হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর সাথে কাজ করতে গিয়ে আমরা আনন্দ পায়।এবং আনন্দের অন্যতম উৎস হলো আমরা নিজেদের অর্থায়নে সমাজের নিম্নশ্রেণির সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করে আসছি।আমাদের কাজের তালিকায় আমরা বেশিরভাগই এতিম,হেফজ শিক্ষার্থী ও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য কাজ করেছি।ভবিষ্যতেও সম্মিলিতভাবে হাতে হাত রেখে দেশ ও দশের জন্য কাজ করে যাবো এবং কাজের পরিধি বৃদ্ধি করবো। কাজের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করবো।

হাসিঘর ফাউন্ডেশন এর সম্পর্কে বলতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংগঠনের ইন্সটিটিউশনাল অ্যাফেয়ার্স উইং অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিষয়ক শাখার কো-অর্ডিনেটর ওয়াফি আলম ফাতেমা জানায়, হাসিঘর ফাউন্ডেশন সবসময় অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।এবং ভবিষ্যতেও তাদের নিয়ে কাজ করে যাবে।আমাদের মূলমন্ত্র অসহায়ের মুখে হাসি ফুটাবো। তার পাশাপাশি আমরা আরো একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।তা হলো স্কুল,কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার মানসিকতা তৈরি করা ও স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক কাজে উৎসাহী করা।আমরা ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি।বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের শাখা রয়েছে। তাদেরকে আমরা স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছি এবং স্বেচ্ছায় সামাজিক কাজ করার মানসিকতা তৈরি করাচ্ছি।তারা স্বানন্দে গ্রহণ করছে এবং তৃপ্তির সাথে স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও মানবিক কাজ করছে।আমাদের স্বপ্ন আমরা কক্সবাজারের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক,মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে উদ্বুদ্ধ করা ও যুক্ত করার মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে সোনার বাংলা বিনির্মাণে কক্সবাজার ছাড়িয়ে ভবিষ্যতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক কাজে অবদান রাখার মানসিকতা তৈরি করবো এবং তাদের সাথে নিয়ে কাজ করবো।

প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াসিন সিকদার বলেন,শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী কাজে উৎসাহী করা আমাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য।ছোট থেকেই অসহায়,দু:স্থ,পথশিশু ও রাস্তার ভবঘুরে মানুষ দেখলেই তাদের জন্য মায়া কাজ করতো এবং তাদের নিজের সাধ্য মতো সবসময় সাহায্য করে গিয়েছি।এবং করোনার শুরু থেকেই বন্ধু ও সমবয়সীদের নিয়ে গরীব ঘরবন্দি পরিবারে খাবার পৌঁছনো থেকে শুরু করে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মাস্ক ও লিফলেট ও স্যানিটাইজার বিতরণ করা ইত্যাদি কাজ করেছি এবং মানুষের জন্য কাজ।