নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ।সংঘবদ্ধ পাহাড় খেকোরা প্রশাসনের নজর এড়াতে সন্ধ্যা থেকে রাতভর পাহাড়ের মাটি কেটে ডাম্পার গাড়িতে করে পাচার করে। এসব মাটি দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, জমি ও পুকুর ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটভাটায় ইট তৈরিতেও পাহাড়ের এই মাটি ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে পাহাড় কাটায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের তুলাবাগান,স্কুলের পাহাড় মারিয়ার দীঘি, কম্বনিয়া, জামবাগান, মিজ্জি আলীর দোকান, দক্ষিণ মিঠাছড়ির, সাদরপাড়া, চাইন্দা, কাটিরমাথা, বনতলা, পানেরছড়ার বলিপাড়া, লম্বাঘোনা, শিয়াপাড়া, ঘোনার পাড়া, হুয়ারিঘোনা, মরিচ্চাঘোনা, চাইল্যাতলী,মগেরঘোনা, জোয়ারিনার নুনাছড়ি, উত্তর মিড়াছড়ি, নন্দাখালী মুরাপাড়া, কারিগরি কলেজের পশ্চিম ও পূর্বপাশের এলাকা,রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিছনের এলাকা,কাউয়াখোপ ইউনিয়নের উখিয়ার ঘেনা,রাজারকুল ইউনিয়নের পন্জেখানা, কাঁঠালিয়ামুরা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। উঁচুনীচু এসব পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতের রাস্তা সংকীর্ণ হলেও পাহাড় কেটে সেখানে ট্রাক, মিনি ট্রাক চলাচলের উপযোগী রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।দিনরাত পাহাড় কেটে ডাম্পারে করে নিয়ে ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড় কেটে পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া এই চক্রটি সংঘবদ্ধ। পাহাড় কাটা শুরু করলে প্রশাসনের আশেপাশে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে তাদের লোকজন পাহারায় থাকেন। তাই প্রশাসন অভিযানে বের হলেই তারা সটকে পড়েন। যার কারণে অভিযান করেও এসব পাহাড় খেকোদের সহজে শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এই চক্রটি পাহাড় নিধন করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আবার প্রশাসনের একটি পক্ষের সাথে এই পাহাড় খেকোর যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এমনি এক ভয়াবহ পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে প্রতিবেদক দক্ষিণ মিঠাছড়ির সাদরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখে, স্থানীয় ওমর মিয়ার তিন ছেলে সিদ্দিক আলম,জুহুর আলম, মনির আলম ১শত ফুট উঁচু পাহাড় কেটে ডাম্পার গাড়িতে করে মাটি পাচার করে করছে।দিনরাত শ্রমিক দিয়ে পাহাড়টির অধিকাংশ কেটে মাটি কেটে পাচার করছে।
আরও দেখা যায়, ওমর মিয়ার ছেলে জুহুর আলম পাহাড় কেটে যে জায়গা খালি হয়ে সেই স্থানে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ করছে।উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ’কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখায় স্থানীয় সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে লিংক রোড বিট কাম স্টেশনের বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান শুভন’কে অবগত করা হলে তিনি বলেন,আমরা পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করে পাহাড় কাটা ও পাকা দালান নির্মাণের সত্যতা পেয়েছি।পাহাড় কাটায় জড়িতদের আর যেন পাহাড় না কাটে তাদের নিষেধ করেছি।এবং পাকা দালান নির্মাণ হলেও তার এখন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
প্রতিবেদক পাহাড় কাটা ও পাকা দালান নির্মাণের বিষয়ে কোনোপ্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি-না জানতে চাইলে, বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শুভন বলেন,এমনিতে আমি মামলা করতে রাজি নয়।আপনি যদি পেশা ক্রিয়েট করেন তাহলে মামলা দেওয়া যায়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন,আমরা পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো: সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল বলেন,পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।