নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদগাঁওতে শিক্ষার্থী,শিক্ষক,অভিভাবকদের ঈদগাহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে কয়েকদিনের লাগাতার আন্দোলন ও শেষে মহা সড়ক অবরোধের মুখে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগ উঠা ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতকে দায়িত্ব থেকে বিরত করে পহেলা সেপ্টেম্বর,২০২৪ (রবিবার) দুপুরে লিখিত আদেশ জারী করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সুবল চাকমা।
সুত্রে জানা যায়,এর আগে স্কুলের তহবিল নিয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন ও শেষে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র জনতা।
স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকরা জানান, খুরশিদুল জান্নাত প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীতিমালার অপব্যবহার করে আসছেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহমুদুল করিমকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়ে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম শুরু করেন প্রধান শিক্ষক।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদগাঁও বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্হিত স্কুল মার্কেটের ৩০ টি দোকান ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সেলামী চুক্তির বাইরে ৩০ লক্ষ টাকার বেশী হাতিয়ে নেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক।
এলাকাবাসী জানান, এছাড়াও বহিরাগত সন্ত্রাসী, পতিত সরকারের আরো কতিপয় নেতা ও ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চলতে থাকেন বছরের পর বছর। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ হলেও সভাপতি ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাবে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার এসব ধামাচাপা দেন। এভাবেই চলতে থাকে কোটি টাকার দুর্নীতি।
স্কুলের শিক্ষক আশিক ও খালেক জানান, এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে গড়ে তুলেন নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। যাদের দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদী শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রদের উপর হামলা, হুমকি,নাজেহাল ও হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং দুর্নীতিবাজ এ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। যা পরে চরম আকার ধারণ করে।
গতকাল (রবিবার) ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পূর্ব নির্ধারিত আন্দোলন কর্মসূচি। যা এলাকা জুড়ে মাইক ও লিফলেটযোগে ব্যাপক প্রচার করা হয়।
জানা গেছে, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় আগের দিন রাতে দুই দিনের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওইদিন এবং রাতে স্থানীয় বিভিন্ন মহল নানাভাবে পরিস্থিতি সামলাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অভিযোগ উঠা প্রধান শিক্ষকের সাথে দফায় দফায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। অবশেষে গতকাল (রবিবার) সকাল থেকে পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন মহল ঈদগাঁও বাজার ও প্রতিষ্ঠান এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার সংবাদ শুনে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এভাবে হাজারো শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান অব্যাহত রাখলে ঈদগাঁও বাসস্টেশনস্থ মহাসড়কের উভয় পাশে শতশত গাড়ি আটকা পড়ে। দুপুরের দিকে নির্দিষ্ট কিছু শর্তজুড়ে দিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে বিরত করা হয়েছে মর্মে উপজেলা কার্যালয় থেকে পত্র জারি হলে দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীদের অবরোধ প্রত্যাহার করে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাত ফোন রিসিভ না করায় উপরোক্ত সব ব্যাপারে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক খুরশিদুল জান্নাতকে তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।