রফিক মাহমুদ, উখিয়া:
উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ও রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের অনুপস্থিতির কারণে দুই চেয়ারম্যানকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সুত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সুত্র জানান, এ-সংক্রান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি প্রেরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিজনিত কারণ দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বিকল্প চেয়ে এ চিঠি প্রেরণ করা হয়।
সূত্রমতে, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. সালাউদ্দিনের পরিবর্তে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। অপরদিকে রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদার পরিবর্তে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান অথবা একজন প্রশাসক।
রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর প্যানেল চেয়ারম্যান মোক্তার আহমদ জানান, গত ২৬ দিনধরে পরিষদে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার কারণে সাধারণ জনগণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন নিয়ে মানুষ বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে।
রত্নাপালং ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম আজাদ প্রতিবেদক কে জানান, একটি ইউনিয়ন পরিষদে ২৮টির মতো নাগরিক সুবিধা গ্রহণ করে থাকে সাধারণ জনগণ। গত ২৬ দিনধরে পরিষদে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকার কারণে মানুষ সকল ধরণের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা মানুষ চাইলেও অন্য কোথাও থেকে নিতে পারেনা। তাই দ্রুত এর একটি বিহিত করা প্রয়োজন।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছৈয়দ হামজা জানান, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে চলছিল। ৫ আগস্টের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও অনুপস্থিত, সাধারণ জনগণ পরিষদে এসে কোন নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের নানাধরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুতসময়ের মধ্যেই এর সমাধান না হলে মানুষ আরও বেশি সমস্যায় পড়বে।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বসেননি আওয়ামী লীগের পদধারী দুই ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হুদা ও সালাহউদ্দিন। ফলে প্রায় এক মাস ধরে সেবাবঞ্চিত দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার সেবাপ্রত্যাশী নাগরিক।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সংশ্লিষ্ট দুই চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তারের আতঙ্কে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তানভীর হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিকসহ যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের জনসেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ নাগরিকসেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ইউএনও বলেন, এমতাবস্থায় উদ্ভূত অসুবিধাসমূহ দূরীকরণের জন্য এবং ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দেশনা চেয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০২১ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রত্নাপালং থেকে নির্বাচিত হন নুরুল হুদা। অপরদিকে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে একই সঙ্গে নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এই বছরের ২৮ এপ্রিল। ফলে, ওই শূন্য পদে প্রাধান্যের ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন।
দুই ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সাধারণ মানুষের দাবী দ্রুত সময়ের মধ্যেই চেয়ারম্যানদের বিকল্প ব্যবস্থাগ্রহণ করে পরিষদের সেবাসমুহ সচল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।