সোয়েব সাঈদ, রামু

দশ মিনিটের জন্য ঘর থেকে বের হন জয় হোড় (২৫)। কিন্তু চারদিন পার হলেও খোঁজ মেলেনি তার। এরই মধ্যে থানা-পুলিশ, র‍্যাব কার্যালয়, গোয়েন্দা পুলিশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। কেউ মুক্তিপণও দাবি করেনি। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলের সন্ধান না পেয়ে পরিবারটিতে চলছে আহাজারি। কান্না করতে করতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন জয়ের মা শৈল বালা হোড় (৫৩)।

জয় কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের উত্তর শ্রীকুল গ্রামের অজিত হোড়ের (৬৪) ছেলে। জয় পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান। বাড়ির পাশের একটি দোকানে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন জয়। এঘটনায় গত ৩০ জুলাই রামু থানায় সাধারণ ডাইরি করেন তার বাবা অজিত হোড়।

এদিকে নিখোঁজের পর থেকে জয়ের বন্ধুবান্ধব,আত্মীয় স্বজনসহ অনেকেই সন্ধান চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তাকে কি অপহরণ বা গুম করা হয়েছে, ছেলেটি কি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন নিশ্চিত নন পরিবারের কেউ।

তার বাবা অজিত হোড় জানান, গত ২৯ জুলাই রাত ১০ টার দিকে দশ মিনিটের জন্য তার ছেলে ঘর থেকে বের হন। ঘণ্টা পার হলেও ঘরে না ফেরায় তার মোবাইলে বার বার ফোন করি। রাত পৌনে ১১ টার দিকে একবার ফোন ধরে একটা অনুষ্ঠানে আছি বলে ফোন কেটে দেয়। তাতে আরও সন্দেহ বাড়ে।

অজিত বলেন, ফোন ধরলেও ওই কণ্ঠ আমার ছেলের বলে মনে হয়নি। তাই এর পরে ছেলের নম্বরে আরো কয়েকশো বার ফোন করি,ফোন ধরেনা। রাত পৌনে দুইটা থেকে ওই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পরদিন ৩০ জুলাই রামু থানায় জিডি (নম্বর-১২২৬) করা হয়। এরপর থানা,র‍্যাব কার্যালয়ে অনেকবার ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ছেলে কি বেঁচে আছে, নাকি তাকে মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানেন না জয়ের বাবা- মা।

‘জয় আমার একমাত্র ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আরো এক মেয়ে কলেজে পড়ে। আমার বয়স হয়েছে কোন কাজ কর্ম করতে পারি না। বর্তমানে ছেলের আয়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়েসহ চারজনের সংসার চলে। এমন পরিস্থিতিতে আমার পরিবারে মহা দুর্দিন নেমে এসেছে।’ বলেন অজিত হোড়।

জয়ের সঙ্গে কারও কোন বিরোধ নেই। কোনো অসামাজিক কাজেও জড়িত নন জানিয়ে বোন কলি হোড় বলেন, নিখোঁজের দিন থেকে তাদের মায়ের কান্না থামানো যাচ্ছেনা। কাঁদতে কাঁদতে কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন তাদের মা শৈলবালা হোড়। তার ভাইটির উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্তরিক সহযোগিতা চান কলি।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা জিয়াউর রহমান সেলিম বলেন, ছেলেটি আমাদের চোখের সামনে বড় হয়েছে। কোনোদিন তার সম্পর্কে খারাপ কিছু শোনা যায়নি। আর পরিবারটিও এমন সচ্ছল নয় যে, মুক্তিপণের আশায় কেউ তাকে অপহরণ করবে। আসলে কি হয়েছে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর থেকে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমানে সব থানায় ম্যাসেজ দিয়েছি। নিখোঁজ ছেলেটার মোবাইলের শেষ লোকেশন উত্তর ফতেখাঁরকুল দেখিয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ওই এলাকায় একাধিকবার পুলিশ অভিযান করেছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মোবাইলটি বন্ধ রেখেছে। এরপরে আমরা ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।