প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রিয় দেশবাসী,

আপনারা সকলে অবগত আছেন যে বাংলাদেশ সরকার ও প্রশাসনের সুস্পষ্ট নির্দেশনায় পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াট এবং সর্বশেষ সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ সরকারদলীয় সংগঠন আওয়ামি লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও আপামর জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। আহত করা হয়েছে হাজারো বেসামরিক নাগরিককে। যেখানে যুদ্ধাবস্থাতেও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিককে আক্রমণ করা যায় না, সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সহ আপামর জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। যা সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও গণহত্যা। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এই গণহত্যার বিচার করা তো দূর, নানাবিধ উপায়ে এই গণহত্যাকে জায়েজ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে শিক্ষকরা যখন মাঠে নেমে আসে তখন তাদের উপরও পুলিশ আঘাত হানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর এমন ধৃষ্টতা ছাত্র সমাজ সহ আপামর জনতা কখনোই মেনে নেবে না। অপ্রাপ্তবয়স্কদের কেও রিমান্ডে নেয়ার মাধ্যমে যেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি স্পষ্ট হয়েছে সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির উপর ভর করেই সরকারি গণহত্যা চালিয়েছে। গুমখুন হত্যা গণগ্রেপ্তার এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে যে ভয় সংস্কৃতি তৈরির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বাংলাদেশের আপামর জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে তা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।দল মত নির্বিশেষে ছাত্র জনতার এই সম্মিলিত যে গণজোয়ার সেই গণজোয়ারই আমাদের আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি।

আপনারা দেখতে পেয়েছেন ছাত্র জনতার ঐক্যের ফলে আজ যেই ছয় সমন্বয়ককে নিরাপত্তাহীনতার দোহাই দিয়ে ডিবি অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল তাদেরকে ছেড়ে দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। এটা স্পষ্ট করে যে, ছাত্র নাগরিকের সুস্পষ্ট ঐক্য থাকলে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে করে

প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় এবং ফিরে আসা যায়। এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বায়ক আরিফ সোহেল সহ সারাদেশে হাজারো শিক্ষার্থী ও জনতাকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হচ্ছে এবং রিমান্ডে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলীর উপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশের সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে ধন্যবাদ দিচ্ছি সেই সকল শিক্ষককে যারা জাতির এই দুঃসময় শিক্ষার্থীদের পাশে এসে অভিভাবকের মত আগলে রেখেছেন, পুলিশি গ্রেফতার ও হামলা থেকে ঢাল হয়ে তাদেরকে রক্ষা করছেন।

প্রিয় দেশবাসী ও সচেতন ছাত্রসমাজ,

আমরা স্মরণ করছি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিহত হওয়া সেই সকল শহিদদের যাদের আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। ছাত্র জনতার এই বিপদসংকুল মুহূর্তে প্রাণভয়কে উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সকল শহিদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার হওয়া সকলের স্মরণে আগামীকাল দেশব্যাপী ‘দোয়া ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

কর্মসূচি: গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল সারাদেশে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া মোনাজাত, মন্দির, গির্জা সহ সকল প্রার্থনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন, ও জুমার নামাজ শেষে শহিদদের কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

শ্রমিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-ওলামা সহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে আগামীকালের ‘দোয়া, শহিদদের কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করে তুলুন। মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে চুপ থাকবেন না। মসজিদের মেম্বার থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারাই জাতির দুর্দিনের কাণ্ডারি। এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে গণহত্যা ও গণ গ্রেফতার এর প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবিতে বাদ জুমা মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে দোয়া ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল বাস্তবায়ন করুন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন