জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

বাংলাদেশী পাসপোর্টে পুনরায় ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দদ্বয় সংযুক্ত সহ পাঠ্যবইয়ে মসজিদুল আকসার মর্যাদা ও ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত করতে পাঠ্যপুস্তকে এ সংক্রান্ত পাঠ সংযুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশন।

আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকেলে আন্তর্জাতিক কুদস সপ্তাহ- ২০২৪ উপলক্ষ্যে রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি অডিটোরিয়ামে ‘গাজায় গণহত্যার ইতিবৃত্ত: মানবতার দায়’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে এ দাবি জানিয়েছে বক্তারা।

ইন্তিফাদা ফাউন্ডেশন এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এ সেমিনারের আয়োজন করে।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু এবং আন্তর্জাতিক কুদস সপ্তাহ ২০১৪ এর বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর মুহাইমিনুল হাসান রিয়াদ।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী সংগীত পরিবেশন করেন।কবি ও কথা সাহিত্যিক আবদুল হাই শিকদার ‘ফিলিস্তিনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক: একাত্তর থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা ও কবিতা আবৃত্তি করেন।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তুর্কিয়ে দূতাবাসের রিলিজিয়াস এফেয়ার্স বিষয়ক কো-অর্ডিনেটর ওজগুর ওজইউরেক।তুর্কি ভাষায় রাখা বক্তব্যে তিনি বলেন, “আজ ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তার বিরোধিতা করতে এবং গাজার নিরীহ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে আরব বা মুসলিম হওয়া জরুরী নয়; মানুষ হওয়াই যথেষ্ট। আজ ফিলিস্তিন ইস্যু প্রতিটি মানুষের ইস্যু হওয়া উচিত। আজকের এই পরিস্থিতি নিয়ে নীরব থাকা মানব ইতিহাসের অন্যতম বড় অপরাধ। ফিলিস্তিন ইস্যুটি ধর্ম, ভাষা, ও জাতি নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য একটি বড় পরীক্ষা এবং ওইসব ব্যক্তিদের জন্য দায়িত্বের বিষয় যাদের অন্তরে বিবেক ও ন্যায়পরায়ণতা রয়েছে। এটি মানবতার সম্মান ও মর্যাদার বিষয় যেখানে বিশ্বের জনগণ, রাষ্ট্র, শাসক এবং রাষ্ট্রনায়কদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা যাচ্ছে”।

সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক যুবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হক। তিনি ‘ফিলিস্তিনের দুঃসময়ে আরব বিশ্বের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘অনেক আরব রাষ্ট্র চায় ফিলিস্তিনিরা যুদ্ধ না করে ইসরায়েলের সাথে মিলেমিশে থাকুক। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা সেটা চায় না। তারা স্বাধীনতা চায়। তারা আল আকসা মুক্ত করতে চায়। তারা চায় আরব দেশগুলো তাদের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাক এবং বিভিন্নভাবে চাপ অব্যহত রেখে ইসরায়েলকে দূর্বল করুক। কিন্তু, এটি হবার নয়। কারণ, এই আরব দেশগুলোকে রাজতান্ত্রিক এবং মার্কিনিদের মদদপুষ্ট হওয়ায় তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র রুষ্ট হোক, এটা চাইবে না।’

অধ্যাপক যুবায়ের বলেন, ‘মূলকথা হলো- নিজেদের কাজটি নিজেদেরই করতে হবে। আর সেটা আরবরা করবে না জেনেই হামাস করছে। মুক্তির কথা, মুক্তির সংগ্রামটাকে জাগিয়ে রাখতে হবে। আলোচনা না থাকায় কাশ্মীর ইস্যুর মতো অনেক ইস্যু হারিয়ে গেছে। তাই, আমাদের চেতনাকে জাগ্রত রাখতে হবে। আমরা দূর্বল হলেও জোরে চিৎকার করতে হবে’।

সেমিনারে কয়েকটি প্রত্যাশা ও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

১. মাসজিদুল আকসার সন্মান-মর্যাদা রক্ষায় পৃথিবীর সকল মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া।

২. রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল মুসলিম দেশ মাসজিদুল আকসা ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হওয়া ও জোড় তৎপরতা চালানো।

৩. নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের মৌল-মানবিক চাহিদার উন্নত সংস্থান করার পাশাপাশি ভেঙ্গে পড়া অবকাঠামো সংস্কারে অর্থ-সম্পদের জোগান দেওয়া।

৪. মাসজিদুল আকসার মর্যাদা ও ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত করতে পাঠ্যপুস্তকে এই সংক্রান্ত পাঠ সংযুক্ত করা।

৫. ঈমান ও ইসলামী চেতনা জাগ্রত করতে মাসজিদুল আকসার ইতিহাস পাঠ-পর্যালচনা বৃদ্ধি করা। মসজিদে মসজিদে জুমার খুতবায় আলেম সমাজ মাসজিদে আকসার ঘটনা ও শিক্ষা সম্পর্কিত দারস পেশ করা।

৬. বাংলাদশি পাসপোর্ট এ ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দদ্বয় পুনরায় সংযুক্ত করা।

৭. পৃথিবীর স্থায়ী শান্তি আনয়নের লক্ষ্যে দখলদার ইসরায়েলিদের মধ্যপ্রাচ্য থেকে অন্যাত্র স্থানান্তর করা