আবদুর রহমান খান

তিন বছর আগে জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্র মার্যাদা হরণ করে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিকে ভারতের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসার পর নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার দাবি করেছিল এ অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সহজ হবে। বাস্তবে পরিস্থিতি তার উলটো হয়েছে। ভূস্বর্গ বলে অভিহিত কাশ্মীর উপত্যকায় প্রতিদিন রক্ত ঝড়ছে। আত্মাহূতি দিচ্ছেন কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী প্রতিরোধ যোদ্ধাগন। সুযোগ পেলে পালটা হামলা চালিয়ে হত্যা করছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য আর তাদের সহযোগীদের। য়

সর্বশেষ হামলায় আজ (শনিবার) অজ্ঞাত গেরিলার দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত সম্প্রদায়ের সদস্য পুরাণকৃষাণ ভট্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ নিয়ে রাজ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

গত কয়েকমাসে, কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং দেশের অন্যান্য অংশ থেকে কর্মসংস্থানের সন্ধানে কাশ্মীর উপত্যকায় আসা লোকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত গেরিলা হামলা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু লোক প্রাণ হারিয়েছে। তারপর থেকেই কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

ওদিকে, পলিশ উত্তর কাস্মীরের বান্দিপড়া জেলার আস্তানগো এলাকাথেকে ১৫ কেজি পরিমানের স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত বিষ্ফোরক ( আই ই ডিী) জব্দ করে বড় রকম নাশকতা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেছেন, শোপিয়ানে পুরাণকৃষাণ ভট্টের উপর সন্ত্রাসী হামলা একটি কাপুরুষোচিত কাজ। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করে এক বার্তায় বলেন, আমি জনগণকে আশ্বস্ত করছি যে সন্ত্রাসীদের এবং যারা তাদের সাহায্য করে এবং প্ররোচনা দেয় তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।

আজ কাশ্মীর পুলিশ এক বার্তায় বলেছে, ‘শোপিয়ানের চৌদারি গুণ্ড এলাকায় বাগিচায় যাচ্ছিলেন পুরাণকৃষাণ। তখন ওই সংখ্যালঘু ব্যাক্তিকে নিশানা করে গুলি করে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’

আজ জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবিন্দর রায়না এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের পিছনে পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এ ধরণের কাপুরুষোচিত ষড়যন্ত্র করেছে। এবং যেভাবে কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজের যুবকদের নিশানা করা হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে পাকিস্তান ও পাকিস্তানি সন্ত্রাসী যাদের সেনা ও পুলিশ নির্মূল করছে তারা এ সময়ে খুব ভীত ও উদ্বিগ্ন হয়ে এ ধরণের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানি ও সন্ত্রাসীদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করা হবে। যারা কাশ্মীরি পণ্ডিত যুবকদের নিশানা করার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করেছে তাদের সকলকেই এর হিসাব দিতে হবে।’

চলতি বছরে গেরিলারা এ পর্যন্ত উপত্যকায় ২৪ জনেরও বেশি লোককে গুলির নিশানা বানিয়েছে। এর মধ্যে সাতজন পুলিশ, আটজন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ছয়জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে কাশ্মীরে টার্গেট কিলিং চলছে। নিহতদের অনেকেই অভিবাসী শ্রমিক বা কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিত। গতবছরের অক্টোবরে পাঁচ দিনে নিহত হন সাতজন। এর মধ্যে একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত, একজন শিখ এবং দু’জন অভিবাসী হিন্দু ছিলেন।

গত মে মাসে একের পর এক টার্গেট কিলিং এর জেরে উপত্যকায় অস্থিরতার পরিবেশ দেখা যায়। সেজন্য কাশ্মীর উপত্যকায় কর্মরত কাশ্মীরি পণ্ডিত কর্মচারী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু কর্মচারীরা জম্মুতে চলে যান। কাশ্মীরি পন্ডিত কর্মচারী এবং পিএম প্যাকেজের অধীনে কাজ করা সংরক্ষিত শ্রেণীর কর্মচারীরা প্রায় পাঁচ মাস ধরে জম্মুতে ধর্না-অবস্থান করছেন এবং উপত্যকার বাইরে তাদের নিয়োগ করার দাবি করছেন। আজকের হত্যার ঘটনার পর, উভয় সংগঠনই জম্মুতে প্রতিবাদ করেছে এবং ওই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। একই সঙ্গে জম্মুতে বসবাসকারী উপত্যকায় কর্মরত কর্মীদের কাশ্মীরের বাইরে নিয়োগ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।