দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার:

সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ঈদুল আজহায় টানা ছুটি শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে ঈদ আনন্দ উদযাপনের জন্য নানা প্রস্তুুতি নিয়েছে মানুষ। বিশেষত চাকরিজীবীদের পরিবারে এখন খুশির বান ডেকেছে। কারণ, বছরের এ সময়গুলোতেই তারা টানা চার-পাঁচ দিন ছুটি কাটানোর সুযোগ পান। পরিবারের সবাই একসঙ্গে সময় কাটাতে পারেন।

ঈদ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কর্মব্যস্ত মানুষ নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি। পরের তিন দিন (রোব-সোম-মঙ্গলবার) ঈদের ছুটি। কেউ কেউ আবার বুধ-বৃহস্পতিবার আবেদন করে ছুটি নিয়েছেন। ফলে লম্বা একটা সময়ই পাচ্ছেন কর্মজীবীরা। ফলে ছুটির সময়টা কাজে লাগাতে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। এরমধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার। ফলে ঈদ ঘিরে আরও একবার মুখর হয়ে উঠবে বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকত, এমনটাই ধারণা পর্যটন ব্যবসায়ীদের।

ভ্রমণপিপাসুদের অনেকে নিরাপদ অবকাশ যাপনের জন্য বিশেষ করে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার বন্ধে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন লাখ লাখ পর্যটক। তাই সকল হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউসের রুম পাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে। যারা আগে থেকে বুকিং না দেন তাদের রাত যাপন না করেই কক্সবাজার ত্যাগ করতে হয়। আবার অনেকেই সাগর পাড় কিংবা রাস্তায় রাত কাটাতে দেখা গেছে। এবার চিত্রটা ভিন্ন। কিছু কিছু হোটেলে আগাম বুকিং দিলেও বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের রুম এখনো ফাঁকা।

ঈদুল আজহার ছুটিতে হোটেল-মোটেল বুকিংয়ের এমন নিম্নগামিতা হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে জরুরী বৈঠকও করেছে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি।

বৃহস্পতিবার সকালে এই জরুরী বেঠক করেন সমিতির নেতারা। বৈঠকে সম্প্রতি সংঘটিত বন্যা এবং পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটা যাওয়ার ইচ্ছাকে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং হ্রাসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এই দুই কারণে এতটা বিপর্যয় হতে পারে না বলে মনে করা হচ্ছে। আরো গভীরতর কারণ অনুসন্ধানে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবেন নেতারা।

হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজারের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। এমনকি কটেজগুলোতেও বুকিংয়ের হিড়িক পড়ে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।

তিনি জানান, ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকী। কিন্তু বহু হোটেলে কোনো কক্ষ বুকিং হয়নি। যেগুলোতে হয়েছে সেখানে ৩০ শতাংশের নিচে। সর্বসাকুল্যে ২০ শতাংশও হবে না। স্মরণকালে এমন বিপর্যয়ের চিত্র দেখেনি কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ইট-পাথরের খাঁচায় যান্ত্রিক জীবন কাটানো মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণের ছক কষেন। কোরবানির ঈদে টানা ছুটির সুযোগে অনেকে আগাম রুম বুকিং দিয়েছেন। যদিও বা অন্যান্য বছরের তুলনায় তা কম। যারা পশু কোরবানি দিচ্ছেন বা যাদের নানা সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে তারা কোরবানির দিন হয়তো বাইরে কোথাও বের হবেন না। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন তাদের অনেকেই ছুটে আসবেন কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের চাপ অনেক বাড়তে পারে।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সদস্য ও দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মুহাম্মদ মনে করছেন, বর্ষাকাল চললেও বৃষ্টির দেখা তেমন নেই। আকাশে মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা। এ সময়টাতে বরং পর্যটকদের পদচারণায় সৈকতের চিত্র আরও মোহনীয় ও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠবে।

এদিকে কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটন স্পটে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তা জোরদারে সব স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতামূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।

হোটেল সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী জানান, প্রতি ঈদেই কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। এখন বৃষ্টি মৌসুম হলেও পর্যটকের কমতি হবে না। এবারও ঈদে উৎসবমুখর হয়ে উঠবে কক্সবাজারের প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র।

হোটেল অস্টারইকোর পরিচালক মুহাম্মদ রিয়াদ বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন খাত দিয়ে সরকারের রাজস্ব বিভাগ যে পরিমাণ আয় করে সে অনুযায়ী পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটক আগমন বাড়বে। সেটা মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনে জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

স্থানীয় রিকশা, ব্যাটারি বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো যেন বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঈদ ঘিরে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় কক্সবাজারে। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা যেমন আসেন, আবার স্থানীয়দেরও ভিড় বাড়ে বালিয়াড়িতে। ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘœ করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। এছাড়াও পুলিশ-র‌্যাবসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল দেবে। ভ্রমণপিপাসুদের ঈদ আনন্দ উপভোগ্য করাই জেলা প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।

পর্যটক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্রিম হোটেল বুকিং না হওয়া মানে ধরে নেয়া এবারে ঈদুল আজহার ছুটিতে কক্সবাজারের স্মরণকালের রেকর্ড কম পর্যটক আসতে পারে। আবার আবহাওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে হোটেল বুকিং ছাড়াই আকস্মিক ছুটে আসতে পারে পর্যটকেরা এমন প্রত্যাশাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পর্যটন ব্যবসায়ীরা।