অনলাইন ডেস্ক: ২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটি। নিরাপত্তা বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে জড়িত বলেও দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে।

ওয়াশিংটন বলছে, বাংলাদেশে ব্যাপক অর্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীকে ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর দুর্নীতি, নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনায় তদন্ত এবং অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করেছে সরকার।

২০২১ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির মূল্যায়নে তৈরি হয়েছে ‘২০২১: কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্যাকটিসেস’। বিশ্বের ১৯০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

রিপোর্টের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক্সিকিউটিভ সামারিতে বলা হয়েছে- সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বহাল, যেখানে ক্ষমতা মূলত কেন্দ্রীভূত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, বাক্সভর্তি জাল ভোট, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। ফলে পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনটিকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে স্বীকৃতি দেননি।

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায়নের সময়সীমায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।

এগুলো হলো— বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, সরকারের পক্ষ থেকে বা তার এজেন্টদের দ্বারা নাগরিকদের নির্যাতন, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির নির্যাতন বা মামলা, কারাগারে জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী পরিবেশ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দী, অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বাধা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনি হস্তক্ষেপ, একজন ব্যক্তির দ্বারা অভিযুক্ত অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিক গ্রেফতার বা বিচার, বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং সমিতির স্বাধীনতার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপ, যার মধ্যে রয়েছে সংগঠন, তহবিল বা বেসরকারি সংস্থা ও সুশীল সমাজ সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধমূলক আইন।

এ ছাড়া শরণার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, উদ্বাস্তুদের সাথে দুর্ব্যবহার, রাজনৈতিক দলগুলোর উপর গুরুতর এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, সরকারি দুর্নীতি; দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে হয়রানি বা সেগুলোর ওপর বিধিনিষেধ, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার জন্য তদন্তের অভাব এবং জবাবদিহিতার অভাব, যার মধ্যে গৃহনির্যাতন এবং অন্তরঙ্গ সঙ্গীর সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, শিশু নির্যাতন, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়েসহ এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক চর্চাগুলো রয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

মার্কিন রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশে পুলিশ, বর্ডার গার্ড এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটগুলোকে নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত নিরাপত্তায় নিয়োজিত। দেশটির সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় প্রতিরক্ষার দায়িত্বে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করেন। বাংলাদেশে বেসামরিক নেতৃত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন উল্লেখ করে মার্কিন রিপোর্টে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করা হয়। তবে ওই রিপোর্ট বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তরফে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

-ঢাকাটাইমস