প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

খাগড়াছড়িতে সদর উপজেলায় গুগড়াছড়িতে ধর্মসুখ বিহারের অধ্যক্ষ বিশুদ্ধ মহাথেরকে হত্যার প্রতিবাদে সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতি ও চকরিয়া উপজেলার বৌদ্ধ জনসাধারনের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকাল ৩টায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় চট্টগ্রাম মহাসড়কস্থ ষ্টেশন মেইন রোড়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে চকরিয়ায় সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতি ও চকরিয়া উপজেলা বৌদ্ধ জনসাধারন। মানববন্ধনে বিভিন্ন বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সহ সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।

ঘুনিয়া চন্দ্রজ্যোতি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উঃ সুমনোপ্রিয় মহাথেরে’র সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজ সোমবার বিকাল ৩ টায় চকরিয়া কেন্দ্রীয় জেতবন বিহার প্রাঙ্গন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষু বিশুদ্ধ মহাথেরকে হত্যার প্রতিবাদে একটি মৌন মিছিল বের করে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পটল বড়ুয়ার সঞ্চালনায় বিশুদ্ধ মহাথের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী সহ সকল প্রকার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন, চকরিয়া কেন্দ্রীয় জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞা মুদিতা ভিক্ষু, মাষ্টার অংখ্যাচিং রাখাইন- সহ সভাপতি কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ, প্রিয়দা বড়ুয়া- সভাপতি বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ চকরিয়া উপজেলা, সোহেল বড়ুয়া- সভাপতি মানিকপুর বৌদ্ধ ধর্মীয় পরিষদ, জয় বড়ুয়া- সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কক্সবাজার জেলা সংসদ, এ্যাপোলো বড়ুয়া- সভাপতি চকরিয়া খেলাঘর, অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ বড়ুয়া- সভাপতি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদ কক্সবাজার জেলা, পরিমল বড়ুয়া- সংগঠনিক সম্পাদক হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা, মাষ্টার সুজিত বড়ুয়া- সহকারি শিক্ষক চকরিয়া কোরক বিদ্যপীঠ, অক্ষয় বড়ুয়া প্রমুখ।

উক্ত মানববন্ধনে বৌদ্ধ ভিক্ষুর হত্যার তদন্ত মুলক সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানান বক্তারা বলেন, খাগড়াছড়িতে বিশুদ্ধ মহাথেরকে হত্যা করা হয়েছে। তার কোন ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকতে পারেনা। তিনি পরিবার-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে, সবকিছুর উর্ধে উঠে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন। গত ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ইংরেজি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বিহারের নিজ বিহারে দিবাগত রাতে কে বা কারা হত্যা করে। তাই এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছি। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, মাঝে মাঝে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উপর এমন নৃশংস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বারে বারে এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকায় আমরা চরম ক্ষুব্দ এবং উদ্বিগ্ন। অতীতের ঘটনা গুলোর আজও কোন কুলকিনারা হয়নি। যে বা যারাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন আমরা এসব নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবী জানাই।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জয় বড়ুয়া বলেন- বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। সকল ধর্মের মানুষের সুশাসন পাওয়া নাগরিক অধিকার। স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অবদান রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশে এরকম বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা খুবই দুঃখজনক। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এরকম হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার হওয়া জরুরি।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ২০০২ সালের ২১ এপ্রিল রাউজানের হিঙ্গলায় ভদন্ত জ্ঞানজ্যোতি মহাস্থবিরকে তার নিজের প্রতিষ্ঠানে জবাই করে হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ মে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের উপর চাকপাড়া গ্রামের বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ধাম্মাওয়াসা ভিক্ষুকে তার নিজ বিহারে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট কুমিল্লা সদর উপজেলার বানাশুয়া রেল ব্রিজের নিচ থেকে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার মতো একটা জঘন্য অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া মানে এরকম আরো দশটা ঘটনা ঘটার পথ সুগম করে দেয়া। তাই এমন নৃশংস, বর্বোরোচিত, সভ্যতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সবার সোচ্চার হওয়া উচিত। তাই আমরাও আজকে প্রতিবাদ জানাতে এবং অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী নিয়ে রাজপথে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি।