নিজস্ব প্রতিবেদক :
সারাদেশে চতুর্থ ধাপে আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন হেলালীর বিরুদ্ধে নিজ দলের এক বড় নেতার ইন্ধনে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ছিল।

আদালত সূত্র জানায়, সেই পরোয়ানায় নৌকায় প্রার্থী হেলাল উদ্দিন হেলালী গতকাল রবিবার দুপুরে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন প্রার্থনা করেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। শুনানী শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রাজীব কুমার দেব তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী আওয়ামী লীগ তথা নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি ছিল। সেই পরোয়ানার বিষয়টি জানতে পেরে হেলাল উদ্দিন হেলালী আত্মসমর্পণ করে আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। এ সময় দীর্ঘ শুনানী শেষে বিজ্ঞ বিচারক তাকে জেলজাহতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

কেন জেলে যেতে হলো নৌকার প্রার্থী হেলালকে?
এদিকে নৌকার প্রার্থী জেলহাজতে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দলের উপজেলার সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র এক নেতার আক্রোশের শিকার হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী হেলাল উদ্দিন হেলালী। এমনকি হেলালীদের পৈতৃক অনেক সম্পত্তি ওই নেতা জবর-দখলও করে রেখেছেন। ওই নেতার পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় বিভিন্ন সময় তাকে (হেলাল) মিথ্যা মামলায়ও জড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তেমনই দুটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ছিল হেলালের বিরুদ্ধে।

উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদী আরো বলেন, ‘ওই নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ থাকায় দলের প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবার তাকে নৌকা প্রতীক দেননি। তাঁর স্থলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের তথা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের ত্যাগী নেতা যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন হেলালীকে মনোনয়ন দেন। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় পুরো ফাঁসিয়াখালীর মানুষ বেশ খুশিও হয়েছিলেন।’

উপজেলাসহ দলের বিভিন্ন ইউনিটের অনেক নেতা অভিযোগ করেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনে অভিযুক্ত ওই বড় নেতা এবার নৌকা প্রতীক না পেয়ে খোদ তাঁর ছোট ভাই এবং ব্যক্তিগত গাড়িচালককেও প্রার্থী করিয়েছেন নৌকার বিজয় ঠেকাতে। এমনকি ভাইকে যেনতেনভাবে জেতাতে ওই আওয়ামী লীগ নেতা রাতে হেলমেট পড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গোপন বৈঠক করছেন। ওইসময় সেখানে যারা উপস্থিত থাকছেন, তাদের কাউকে ছবিও তুলতে দিচ্ছেন না। এমনকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় অনেককে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাঁর ভাইয়ের পক্ষে কাজ করতেও নির্দেশনা দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা এবং কেন্দ্রের দৃষ্টিতে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে উপজেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন।

নৌকার প্রার্থীর প্রধান কৌশলী চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুল কবির বলেন, ‘নিন্ম আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। আমরা জজ আদালতে সোমবারই জামিনের প্রার্থনা জানাবো। আশা করি বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন দেবেন এবং নির্বাচনের মাঠে ফের সরব হতে পারবেন হেলাল।’