বিশেষ প্রতিবেদক:
আত্মস্বীকৃত ১০২ জন ইয়াবা কারবারির অন্যতম নুরুল হুদা, যিনি ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩ ডজনের বেশি মামলা। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল না করা এবং ২,৭১,২৫,৩৩৭ টাকার জ্ঞাত বহির্ভুত সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলের অপরাধে নুরুল হুদার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মহানগর দায়রা জজ ও চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আজ আদালতে মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর। যার মামলা নং-৪/২০২০।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি তো ঢাকায় বদলি হয়েছি। দায়িত্বে থাকাকালে মামলাটি তদন্তাধীন ছিল। এখন কোন অবস্থায় জানি না।
বর্তমান অবস্থা জানতে দুদকে অফিসিয়াল নাম্বারে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর চট্টগ্রাম আদালতের এপিপি ও দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদের নিকট জানতে চাইলে বলেন, দুদকে তো অনেক মামলা। ফাইল না দেখে মুখস্ত তথ্য দেয়া যাবে না।
মামলা কোন পর্যায়ে আছে জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান।
সুত্র মতে, নুরুল হুদা টেকনাফের হ্নীলা ৮ নং ওয়ার্ডের টানা ২ বারের নির্বাচিত মেম্বার। গত ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনেও বিজয়ী হন। এবারসহ তিনবার। আত্মস্বীকৃত এই ইয়াবা ডন কিভাবে বারবার নির্বাচিত হন, ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে।
স্থানীয়রা বলছে, ইয়াবা বেচে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নুরুল হুদা। রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সাঙ্গপাঙ্গরা তার জন্য ঝাপিয়ে পড়েছিল। ভোটের মাঠে জয়ী হতে প্রচুর কালো টাকা বিনিয়োগ করেছে।
এদিকে, লেদা পশ্চিম পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল হুদা নির্বাচিত হওয়ার পেছনে প্রচুর কারচুপি, জালিয়াতি ও ভোটচুরির অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোহাম্মদ আলম। তিনি ওই কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল চেয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রকাশিত গেজেট স্থগিত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখেছেন।
আবেদনে মোহাম্মদ আলম উল্লেখ করেছেন, প্রিজাইডিং অফিসার মো. হানিফ ও নুরুল হুদা পরস্পর নিকটাত্মীয়। তাই ভোটের আগের দিন ৭০০ ব্যালট কেটে সীল মেরে রেখে দেন প্রিজাইডিং অফিসার। দিনের বেলায় আরো ৩০০ ব্যালটে জোরপূর্বক সীল মেরে নিয়ে নেয়। সে কারণে ভোটের দিন ব্যালটের মুন্ডা চেক করতে বললে নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নেন। সংরক্ষিত ব্যালট পেপারের মুন্ডা এবং উপস্থিত কয়েক জন ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ মিলালে জাল-জালিয়াতির আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
তার দাবি, মো. হানিফ প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিজের ব্যবহারের নাম্বার থেকে মেম্বারপ্রার্থী নুরুল হুদা ও তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে বিভিন্ন সময় কথা কথা বলেছেন। ফলাফল নিশ্চিত করতে ভাই নুরুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কললিস্ট বের করলে অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মোহাম্মদ আলম জানান, টেকনাফ থানাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে নুরুল হুদা ও তার পরিবারের নামে ইয়াবা, অস্ত্র, হত্যা মামলাসহ নানা অপরাধে ৫০টিরও বেশী মামলা রয়েছে। যা বিচারাধীন আছে। এমন একজন চি‎িহ্নত রাষ্ট্রদ্রোহী, চোরাকারবারী, সরকারের আত্মস্বীকৃত ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিজয়ী ঘোষণা করা ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয়।
এমতাবস্থায় এই রকম অবৈধ ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে রচিত নির্বাচন মেনে নিলে অদুর ভবিষ্যতে আগামী প্রজন্ম সঠিক নেতৃত্ব হারানোর পাশাপাশি “জোর যার মুল্লুক তার” এই অবস্থার সৃষ্টি হবে। বিধায় সঠিক ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন গ্রহনের স্বার্থে গৃহীত ভোটের কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে ফিঙ্গার প্রিন্টের আবেদন জানান তিনি।
একই সঙ্গে তার নামে প্রকাশিত নির্বাচনী গেজেট স্থগিত রাখার আবেদন মোহাম্মদ আলমের। অন্যথায় জাতি এই ভয়াবহ মরণনেশা ইয়াবা কারবারীর নিকট জিম্মি হয়ে সঠিক নেতৃত্ব হারাতে পারে বলে মন্তব্য তার।
এদিকে, একজন চিহ্নিত মাদক কারবারী কিভাবে বীরদর্পে চলাফেলা করে; নির্বাচনে জেতে, তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী ও দুদকের পিপি আবদুর রহিম।
তিনি বলেন, নুরুল হুদা আত্মস্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী। অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
দুদকের এই পিপি দুঃখ করে বলেন, অনেক আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী কারামুক্ত হয়ে বেপরোয়া জীবন যাপন করছে। মাদক কারবারে জড়িয়েছে। জনগণ তাদের ভোট কেন দেয়, বুঝিনা। আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারী, অপরাধীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিৎ।