যুগান্তর:
কক্সবাজারে সার্ভেয়ারের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা দীর্ঘ দেড় বছর পরও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি।

মামলার আলামত হিসাবে জব্দ করা ওই টাকা আদালতের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। জমা দিয়ে তা চালানসহ আদালতকে অবহিত করার কথা। কিন্তু এ সংক্রান্ত মামলার নথি ঘেঁটে এবং সংশ্লিষ্ট আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জব্দ করা ওই টাকা জমা দেওয়া হয়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন (বর্তমানে পটুয়াখালীতে কর্মরত) র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার হওয়া ওই টাকা কক্সবাজার সদর থানা থেকে বুঝে নিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় তিনি নিজেই বাদী হয়ে দুদক কার্যালয়ে মামলা করেছিলেন। একই সঙ্গে মামলা তদন্তের দায়িত্বেও ছিলেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা অড়াইটার দিকে র‌্যাবের টিম কক্সবাজারের বাহারছড়া বাজারের পিটিআই রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিম খান নামে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সার্ভেয়ারকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাসার রান্নাঘর সংলগ্ন ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা হয় ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকা।

একই দিন ওয়াসিম খানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরেক সার্ভেয়ার ফেরদৌস খানের কক্সবাজারের দক্ষিণ তারাবানিয়ার ছড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া দুই বাসা থেকে বেশকিছু চেকবই, সঞ্চয়পত্রসহ আর্থিক লেনদেন সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব আসামি ও ঘুষের টাকা কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করে।

অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভোগ-দখলে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১/১৬২/৪২০/১০৯ ধারা ও তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং আইনের ২০১২-এর ৪(২) ধারায় ওয়াসিম খানসহ জড়িতে আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ১০ মার্চ মামলা করেন শরীফ উদ্দিন। কক্সবাজার সদর থানা থেকে তদন্তের স্বার্থে উদ্ধারকৃত টাকা ও অন্যান্য কাগজপত্রও আলামত হিসাবে তিনি জব্দ করেন।

জব্দ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জামা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে শরীফ উদ্দিন বলেন, মামলার আলামত হিসাবে ওই টাকা নিজের হেফাজতে রেখেছিলাম। কিন্তু বদলি হয়ে চলে যাওয়ার সময় আমার সুপারভাইজিং কর্মকর্তাকে (উপপরিচালক) মামলার সব কাগজপত্র ও আলামত বুঝিয়ে যাই।

‘জব্দ হওয়া টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে কি না’-প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে উষ্মা প্রকাশ করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর উপপরিচালক মাহবুবুল আলম। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। পরে বলেন, ‘জব্দ টাকা তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই থাকে। কক্সবাজার থেকে র‌্যাবের উদ্ধার করা ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে কি না-সুনির্দিষ্ট এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ধরে নেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই জমা দেওয়া হয়েছে।’

দুদকের দায়ের করা এ মামলাটি বর্তমানে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ওই আদালতের নাজির নুরুল কবির বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘আলোচ্য মামলার বিপরীতে জব্দ কোনো টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার অনুমতি নেওয়া বা জমা দেওয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য আদালতের নথিতে নেই।’

হাইকোর্টে কর্মরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী মামলার আলামত জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পর তা আবার আদালতকে অবহিত করতে হবে।

এ ধরনের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে বা কোনো সংস্থার কাস্টডিতে রেখে দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনের চরম ব্যত্যয়। তাছাড়া রাষ্ট্রও জব্দকৃত এ ধরনের টাকা ততক্ষণ ব্যবহার করতে পারবে না, যতক্ষণ মামলার রায়ে অপরাধ প্রমাণ হয় বা রাষ্ট্রের অনুকূলে ওই অর্থ আদালত বাজেয়াপ্ত না করে।’