সিবিএন ডেস্ক:
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূলে দেওয়া ঘর নির্মাণে ৯ জায়গা দুর্নীতি পাওয়া গেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বেশকিছু ঘর হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙা হয়েছে, কিছু ঘর অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সোমবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অতিবৃষ্টির পানির কারণে মাটি ধসে যাওয়ায় কয়েকটা ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। আর দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা ৯টা জায়গায় দুর্নীতি পাই। প্রত্যেকটা জায়গায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত কয়েকটি ভাঙা ঘরের ছবি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা এই ঘরটায় তাকিয়ে দেখেন তো। এটা দেখে কি মনে হয় এটা ম্যাটেরিয়ালের জন্য ভাঙা বা এমনিই ভাঙা কি মনে হয়। এটা কি মনে হয় কেউ হাত দিয়ে ভেঙে ফেলেছে। ছবিটা দেখে কি মনে হয়? কেউ ভেঙেছে এটা মনে হচ্ছে না।

সরকার প্রধান বলেন, মাত্র ৯টা জায়গায় আমরা দেখেছি সেখানে একটু এদিক ওদিক করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেগুলো কিন্তু ধরা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। (কয়েকটা ছবি দেখিয়ে) কিন্তু যখন ঘরগুলো তৈরি হচ্ছে তখন এই যে শাবল দিয়ে ফ্লোরগুলো..হাতুড়ি দিয়ে দরজা জানালাগুলো ভাঙা..তারও কিন্তু অনেকগুলো ধরা পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের কাছে এটাই হচ্ছে প্রশ্ন- আপনারা ভাঙা ঘরটা দেখলেন, কিভাবে ভাঙলো সেটা দেখেননি। একটা পিলার ওঠার পর মাঝখান দিয়ে ভেঙে ফেলা হলো ওই ভাঙা পিলারের ছবিটা নিয়ে দিলেন। ভাঙলো কিভাবে সেটা কিন্তু দেখেননি। কারা ভাঙলো দেখেননি। কারণ খোঁজেননি। কারা ভাঙলো আমি সেই উত্তরটা পাবো কোনদিন।

তিনি বলেন, আপনারা এইটুকু দেখলেন..আর যারা ভাঙার পরে আপনাদের কাউকে নিয়ে টেলিভিশনে দেখালো তখন কেন জিজ্ঞেস করলেন না যে এটা এভাবে কাটা কেন?জানালাটা কেটে ফেলা কেন? এটা কোন কিছু দিয়ে যে বাঁকা করা সেটা কেন চোখে পড়লো না আমাদের সাংবাদিক ভাইদের?

আওয়ামী লীগ সরকারের মহতী কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অনেকে ঘর ভেঙেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হতে পারে যারা দারিদ্র দেখিয়ে বাহির থেকে পয়সা এনে খায়। নিজেরা সম্পদশালী হয় তাদের আঁতে ঘা লেগেছে। এই গেলো এক গ্রুপ। আরেক গ্রুপ আওয়ামী লীগ এতবড় একটা কাজ করে ফেলছে, এই গরীব মানুষগুলো ঘরে দিয়েছে ফেলছে এটাও পছন্দ নাও হতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ম্যাটেরিয়ালের কোন অসুবিধা ছিল না। একটা কথা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে ঘরগুলো যখন আমরা করলাম। আমাদের তো একটা হিসেব আছে একটা ঘর করতে কতো টাকা লাগতে পারে। কতো ইট লাগতে পারে, কত বালু-সিমেন্ট ইত্যাদি লাগতে পারে। সব হিসেবে করে এবং এগুলোর পরিবহন খরচ হিসেব করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এই পাই পয়সা কিন্তু খরচ করেছে সবাই।

তালেবানের উথানে ভয়ের কিছু নেই
আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানে বাংলাদেশের প্রভাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেখুন, ভয় পেলে ভয়, ভয় না পেলে কিছু না। কোন অবস্থাতেই ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তবে হ্যাঁ আমাদের দেশ থেকে একসময় বহু লোক সেখানে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আসতেন, অর্থ সম্পদ বানায় নিয়ে আসতেন। এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে আমাদের দেশে। যার জন্য আমাদের দেশে একটা সন্ত্রাসী,জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। যাইহোক, আমরা সেটাকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি।

তিনি বলেন, একটাই উপায় আমি মনে করি সেটা হচ্ছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। সেটা করতে হবে সবাইকে। সাংবাদিক বন্ধুরা যারা আছেন আমি সবাইকে বলবো এই সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করবেন। আমরা এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন এবং যথাযথ ব্যবস্থাও নিচ্ছি যেন এ ঘটনার কোন রকম প্রভাব আমাদের দেশে না আসতে পারে। আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এখন এই ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।

ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চ্যাটার্ড ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য যে, করোনার কারণে অনেক জায়গায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বিমানগুলিকে প্রতিনিয়ত বসে থাকতে হয়, আর মেনটেইন্যান্সেরও একটা খরচা আছে। পড়ে থাকলেও কিন্তু ইঞ্জিন চালু রাখা, এটাকে ফ্লাই করানোর পেছনে কিন্তু একটা খরচ হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যেহেতু যাবোই, তখন অন্য এয়ারলাইন্সকে টাকা দিয়ে লাভ কি? নিজেদেরটাই নিয়ে যাই। সেটার সঙ্গে সঙ্গে এটা বোয়িং, অ্যামেরিকান বিমান, জেএফকেতে নামবে সেটাও আমাদের জন্য একটা আনন্দের বিষয়। এর মধ্যে ফুয়েল নেওয়ার জন্য আমরা ফিনল্যান্ডে অবতরণ করি।

টরন্টো, নিউ ইয়র্কসহ আরও কয়েকটি রুটে বিমানের ফ্লাইট চালানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিমানটা বাংলাদেশ থেকে, ঢাকা থেকে সরাসরি ১৪ ঘণ্টায় নিউ ইয়র্ক পৌঁছাতে পারে। এর একটানা পরিচালন ক্ষমতা প্রায় ১৭ ঘণ্টার মতো। আমরা যখন নিয়ে আসি, সিয়াটল থেকে একটানে চলে আসে। সেজন্য আমাদের একটা চেষ্টা আছে, বিমানটা এভাবে চালু করবো।