সিবিএন ডেস্ক:
জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব পদে মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে চাপে পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ একজনকে তিনি এই দায়িত্ব দিচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়েছে। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে খবর ছড়িয়ে পড়ে, সদ্যপ্রয়াত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন দলের তরুণ নেতা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। এরপরই রাজধানীর কলাবাগানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদের কার্যালয়ে বৈঠকে বসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা।

জাপার যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আগামী ৮ অক্টোবর জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্মরণে শোকসভার পরই জাপার নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেবেন চেয়ারম্যান।

গতকাল (৩ অক্টোবর) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু স্মরণে আমাদের তিন দিনের শোক চলছে। মহাসচিব নিয়োগ করতে একটু সময় লাগবে।’

তবে এ ব্যাপারে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কোনও বৈঠক করবেন কিনা, সেই প্রসঙ্গে সরাসরি কোনও উত্তর দেননি জাপা চেয়ারম্যান।

যদিও জাপার কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, রবিবার ও সোমবার বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে জিএম কাদের ফোনে আলোচনা করেছেন। তবে কেউই আলোচনা প্রসঙ্গে মুখ খুলতে রাজি হননি। তারা শুধু এটুকু জানালেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নবম কাউন্সিলে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহাসচিব নিয়োগ দেবেন।

জাপা সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কাগজ জিএম কাদের স্বাক্ষর করবেন বলে সোমবার দুপুরে দলের অভ্যন্তরে খবর ছড়িয়ে পড়ে।

আজ রাত ৮টার দিকে জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন। তার মন্তব্য, ‘যার নাম (ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী) শোনা যাচ্ছে, তিনি তো মাত্র কিছু দিন আগেই দলে এসেছেন। জ্যেষ্ঠ নেতারা তো আছেন, তাকেই কেন মহাসচিব করতে হবে?’

কাজী ফিরোজ রশীদ এ প্রসঙ্গে জানতে জিএম কাদেরকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু চেয়ারম্যান ধরেননি। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়ে তিনি প্রশ্ন তুললেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মহাসচিব করা হলে সমস্যা কোথায়? এরশাদ সাহেব তো জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতেন।’

দলের কার্যালয়ের পরিস্থিতি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তুলে ধরেন কাজী ফিরোজ রশীদ, ‘আজ সদ্যপ্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু স্মরণে তিন দিনের শোক কর্মসূচির শেষ দিন ছিল। তরুণ একজন মহাসচিব হচ্ছেন জেনে কাকরাইলে পার্টি অফিসে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। নেতাকর্মীরা উত্তেজিত। এটা তো সারাদেশের নেতাকর্মীরা মানবে না। কালকে এসে আজকে মহাসচিব কী করে হয়?’

তবে রওশনপন্থী একজন নেতা মনে করেন, ‘বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই জিএম কাদেরের। এটা তিনি নিজেই আলাপ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।’

জাপার রওশনপন্থী প্রভাবশালী আরেক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘আমি তো তিন-চার জনের নাম শুনছি। আজ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। রুহুল আমীন হাওলাদার, মসিউর রহমান রাঙ্গা, কাজী ফিরোজ রশীদ, মজিবুল হক চুন্নু আছেন এই আলোচনায়। আবার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নামও শুনেছি। তিনি তো তরুণ নেতা। তবে, জ্যেষ্ঠ নেতারা তাকে কতটা মানবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

রওশনপন্থী এই নেতা মনে করছেন, চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই প্রথম অগ্নিপরীক্ষায় পড়েছেন জিএম কাদের।

জাপার যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন, ‘শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব নিয়োগ দেওয়ার খবর সত্যি নয়। আগামী ৮ অক্টোবর আমাদের প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর শোকসভা আছে। এরপর কাউন্সিলে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারম্যান এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু গত ২ অক্টোবর রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।