মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই বর্জন করেছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। শনিবার বিকালে লামা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বর্জনের ঘোষনা দেন তারা। তাদের দাবী-জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) নীতিমালা ভঙ্গ করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের তারিখ ছিল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসকেএইচ ছিব্বির আহমদ। এ সময় স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, দিলীপ কান্তি দাশ, আবদুল কাদের, নুরুল হক, মৃত মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিনের পতœী সালমা বেগম, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্জুন শীলের ছেলে রুপন শীল ও খগেশপ্রতি চন্দ্র খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রশাসন-১ শাখার স্মারক নং: ৪৮.০২.০০০০. ০০১.০০.২৯২. ১৮. ১২৯৬, তারিখ ০৭ ডিসেম্বর’২০২০ মূলে মহাপরিচালক (অতিরিক্তি সচিব) মো: জহুরুল ইসরাম রোহেল স্বাক্ষরিত বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই উপজেলা কমিটির রুপরেখা ১”র (ক) অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলার যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত ১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি জামুকা”র চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত; (সভাপতি) (খ) সংশ্লিষ্ট উপজেলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি মাননীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক মনোনীত (সদস্য) (গ) সংশ্লিষ্ট উপজেলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার বা ভারতীয় বা লাল মুক্তিবার্তায় অন্তর্ভুক্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি জেলা প্রশাসক (জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক) কর্তৃক মনোনীত (সদস্য) (ঘ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার (উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রশাসক) (সদস্য সচিব) নির্ধারণ করা দেয়া হয়।

এক্ষেত্রে তারা অভিযোগ করে বলেন, জামুকার এই রুপরেখার পাশ কাটিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার (অব:) আব্দুল আজিজকে জামুকা প্রতিনিধি, নোয়াখালীর চাটখীলের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহাবুবুর রহমানকে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি করে, মাননীয় সংসদ সদস্যে কোন প্রতিনিধি না রেখে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের স্থলে ৩ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই উদ্ভট যাচাই-বাছাই কমিটির পরিবর্তন চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর হাতেহাতে আবেদন করেও কোন সাড়া পান নি। সেইসাথে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেও কোন সদুত্তর পান নি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

তারা আরো জানান, ১৯৮২-৮৩ সনে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পুনর্বাসিত হয়ে ১৫-১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বান্দরবানের লামা উপজেলায় বসতি স্থাপন করেন। তারা বারাবরই স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের বিরোদ্ধাচরণ করে আসছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধগণের বিরুদ্ধে মনগড়া ও কাল্পনিক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাদের গেজেট বাতিল করে অপদস্থ ও হয়রানী করে চলেছেন। হাবিলদার (অব:) আব্দুল আজিজের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি স্থানীয় ৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বীর মক্তিযোদ্ধারা মহামান্য হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেন। ইত্যাবসরে নানা ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে সেই একই ব্যক্তি যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে সর্বস্বান্ত করার পায়তারায় মেতে উঠেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। জামুকা প্রণীত যাচাই-বাছাই রুপরেখার শতভাগ প্রতিপালনের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান ভুক্তভোগী স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব রেজা রশীদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই বর্জন করার কি আছে। তাছাড়া যাচাই বাছাই কমিটি গঠন করে দিয়েছেন জামুকা। এতে আমাদের কোন হাত নেই।

শনিবার ৫ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হয়েছে।