মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার ডিপার্টমেন্ট ১১৭ পৃষ্ঠার ওই বইটি জুলাই মাসে প্রকাশ করে। তারা েওই বইয়ে প্রকাশিত ছবিকে ‘ডকুমেন্টারি ফটো’ বলে উল্লেখ করেছে। অথচ এর মধ্যে বেশ কিছু ছবি বাংলাদেশের মুক্তযুদ্ধকালীন ছবি। ওই বইয়ে ব্যবহৃত আটটি ঐতিহাসিক ছবি বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এগুলোর মধ্যে তিনটি ছবি ভুয়া। ছবিগুলো বিকৃত করা হয়েছে।
ছবিটির নিচে উল্লেখ করা হয়েছে বাঙালিরা মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রুয়ান্ডার গণহত্যা থেকে বাঁচতে তানজানিয়ায় পালাতে থাকা শরণার্থীদের রঙ্গিন ছবিকে সাদা-কালোয় রূপান্তর করা হয়েছে
একটি ছবিতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি কৃষিকাজে ব্যবহৃত একটি সরঞ্জাম নিয়ে দুইটি মৃতদেহের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ১৯৪০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় রোহিঙ্গা কর্তৃক বৌদ্ধদের হত্যার ছবি এটি।কিন্তু ওই ছবিটি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স বলছে, প্রকৃতপক্ষে এটি বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো গণহত্যার ছবি। যখন হাজার হাজার বাংলাদেশিকে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। অথচ সেই ছবিকে বলা হচ্ছে রাখাইনের ছবি।
অন্য একটি ছবিতে দেখা গেছে, লং মার্চ করে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারের নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা ব্রিটিশ উপনিবেশের দখলে যাওয়ার পর বাঙালিরা মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করছে। ঔপনিবেশিক যুগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ হিসেবে ছবিটি দেখানো হয়েছে।
পানি পথে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে বলে এই ছবিটিতে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অভিবাসীরা মিয়ানমার ছাড়ছে
১৯৪৮ সালে ঔপনিবেশিক যুগের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু ওই ছবিটি বিশ্লেষণ করে রয়টার্স নিশ্চিত করেছে যে, ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডার গণহত্যা থেকে বাঁচতে তানজানিয়ায় পালাতে থাকা শরণার্থীদের রঙ্গিন এই ছবিটিকে সাদা-কালো রূপ দেওয়া হয়েছে। পিটসবার্গ পোস্ট গেজেট পত্রিকার জন্য ওই ছবিটি তুলেছিলেন মারথা রিয়াল। তবে ওই ছবিটি মিয়ানমারের এভাবে ব্যবহারের প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও পিটসবার্গ পোস্ট গেজেটের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া আরও একটি সাদা কালো ছবি প্রকাশিত হয়েছে যেখানে একটি ভাঙ্গাচোরা নৌকায় অনেক মানুষকে দেখা যাচ্ছে। নৌকার এই ছবিটি উল্টো করে দেয়া হয়েছে। পানি পথে বাঙালিরা মিয়ানমারে প্রবেশ করছে বলে দাবি করা হলেও রয়টার্স বলছে, এটি ২০১৫ সালের ছবি। সেসময় রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি অভিবাসীরা মিয়ানমার ছাড়ছে। নৌপথে হাজার হাজার মানুষ মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।