মা, ভালো আছ নিশ্চয় ওপাড়ে! তোমার জন্য এভাবে লিখব, বা তোমাকে হারানোর পর আমি এভাবে এতিম হব কখনো কল্পনা করিনি । কিন্তু কেন জানি আজ মনটা বিষন্ন। প্রতিক্ষণ মনে পড়ছে তোমাকে। তুমি কি এই খুশির দিনে ঈদের নামাজের পর আমার সামনে ‘আয় বাবা’ – বলে বুকে জড়িয়ে ধরে আবার ওপাড়ে চলে যেতে পার না? আমার চারপাশে আজ সবাই খুশি করছে । সেই খুশি থেকে আমি অভাগা বঞ্চিত। মা, কাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখেছি। অমন স্বপ্নের পর তোমাকে সামনে দেখতে ইচ্ছে করছে । মা, তুমি মারা যাওয়ার আজ প্রায় ৫ বছর। এখনো পর্যন্ত নিত্তরাতে তোমার মধুমাখা ছবিটি বুকে নিয়ে ঘুমাই। আরেকটা ছবি আমার ম্যানিব্যাগে রাখি। মা আমার একমাত্র ধন দৌলত তো তুমি। রোজ রোজ মুছে রাখি দেয়ালের ছবিটি। এছাড়া আমার কি আছে আর? কাল রাতেও যতœ ঘুমিয়েছিলাম তোমার ছবি নিয়ে। মধ্যরাতের খোয়াব নাকি ভালো হয় না। আমার কপালেও ঠিক তাই হলো। দেখি, একটি পিঁপড়া তোমার ছবির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। যে-ই তোমার গালের ওপর বসেছে, অমনি চিৎকার করে উঠি। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি নি। বয়স এখন ২৬ পার করছি। এখনো আমার বোনদের স্বান্তনা দিতে পারছিনা কেন মা? তাই। আমার কি দোষ, বল? মনে পড়ছে, সেই রাতের কথা। মা তোমাকে নিয়ে যখন ঢাকা চট্টগ্রামে হাসপাতালের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতাম তখন আমি কান্নায় তোমার মাথার কাপড় দিয়ে অশ্র“ মুছে ফেলতাম। তোমাকে স্বপ্নে দেখার আনন্দে আগের দু’রাত এক বিন্দু ঘুমও আসেনি। একটু তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব। এর-ই মধ্যে পিঁপড়া কখন যে তোমার গালে কামড় বসিয়েছে, বুঝতে পারিনি। কেন পিপড়াটা তোমার মুখ থেকে ফেলে দিতে পারলাম না দু:খটা রয়ে গেল। একদিন অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার পর ডাক্তার সাহেব আমাকে বললেন, তোমার মা যা ইচ্ছে করে খাওয়াও । আর মাত্র তিনমাস । তোমার মায়ের দুরারোগ্য ক্যান্সার পুরো শরীর ছড়িয়ে গেছে। তখন আমি কান্না ধরে রাখতে পারলাম না । মায়ের একমাত্র ছেলে হিসেবে আমার বাবা ও বোনদের কিছুই বলিনি। তখন মনকে শক্ত করে সিদ্ধান্ত নিলাম মাকে যেভাবে পারি সাধ্যমত চিকিৎসা চালিয়ে যাব। বাবাকে ফোন দিলাম, বললাম মায়ের অবস্থা খারাপ আমাদের জায়গা-জমি যা আছে সবকিছু দ্রুত বিক্রি করে ফেলেন অনেক টাকার দরকার। জমি বিক্রি হয়েছে। চিকিৎসাও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মাকে বাচাঁতে পারিনি। আমার মাকে নিয়ে এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম। মায়ের মুখে পিপড়ার কামড়। ফেলে দিতে গিয়েই ঘুম ভেঙ্গে যায়! মনটা বিষন্নতায় ভরে আছে আজ । মা তুমি যেখানেই থাক ভাল থাক। আল্লাহ তোমাকে বেহেশতের শ্রেষ্টতম স্থানে রাখুক। আমার মায়ের জন্য সকলের কাছ থেকে এটাই দোয়া কামনা করছি।

ইতি-

মা হারা সন্তান

ছৈয়দ আলম

গণমাধ্যম কর্মী, কক্সবাজার।