অনুপম বড়ুয়া টিপু, ফ্রান্সের প্যারিস থেকে:
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির ২ বছর পূর্তি হলো গত ১২ ডিসেম্বর । এ উপলক্ষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যক্রনের আমন্ত্রণে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা পুনব্যক্ত করতে সমবেত হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আমন্ত্রণে অংশ নিতে প্যারিসে আসেন । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করলেও বাস্তবিক পক্ষে জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যহত রেখেছে। বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ  মোট জ্বালানীর ৩৫ শতাংশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে, যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও এরকম দ্বিমুখী জ্বালানী পরিকল্পনা করেছে।
বিশ্ব জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ এই দ্বিমুখী কয়লা ভিত্তিক জ্বালানী পরিকল্পনার প্রতিবাদের প্যারিসের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এর উদ্যোগে দুদিন ব্যাপী কর্মসূচী পালন করে। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ- বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফ্রান্স শাখা এই সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসুচীতে সংহতি প্রকাশ করতে অংশগ্রহণ করে।
প্রথমদিন ১০ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় বিকাল টা থেকে সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত ‘নব থেয়ার্ত দু মোনতাই’ প্যারিসে পরিবেশ সতেচন বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন প্যারিসে জলবায়ুর পরিবর্তন শীর্ষক গণশুনানি (Peoples Tribunal) আয়োজন করে। জাতীয় কমিটি ফ্রান্স শাখার পক্ষ থেকে এই ট্রাইবুন্যালে অংশ নেয়া হয় এবং সুন্দরবনের উপর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব নিয়ে প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে, এমন সকল তৎপরতা বন্ধ করার দাবী পুনব্যক্ত করা হয়। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে ফ্রান্সের এবং বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয় কমিটি ফ্রান্স শাখার সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম, সদস্য জুয়েল দাশ রায় লেনিন, সদস্য নিলয় সূত্রধর সুমন ও সারদা মনি রায় ছন্দা।
এই গণশুনানি অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সংগঠনগুলো হলো ৩৫০ ফ্রান্স, ট্যুর অল্টারনেটিবা, এএনবি একশন নন ভায়োলেন্ট কপ২১, লে আমি ত্রেরে ফ্রান্স, এট্টাক ফ্রান্স, বিয়ি মুগি, সিআইআরডি, অক্সফাম ফ্রান্স লো লোফেড, জেডইএ, লা ফাউন্ডেশন পোখ লা নেচার এ লা’ওম সহ ইউরোপের অনেকগুলো সংগঠনের প্রতিনিধি
প্রতিবাদ কর্মসুচীর ধারাবাহিকতায় গত ১২ ডিসেম্বর সকালে আন্দোলনকারীরা এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। স্থানীয় সময় সকাল ৮ টায়,প্যারিসের  প্লেস দু পন্থেওন পার্কে  ফ্রান্স সরকারের সকল বাঁধা উপেক্ষা করে ইউরোপীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৮০০ জনের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্হিত প্রতিবাদী জনতা বিশাল কালো চাদর (কয়লা) দিয়ে পৃথিবীকে প্রথমে আবৃত করে, এরপর সে চাদর ছিন্নভিন্ন করে জনতা মুক্ত বাতাসে বের হয়ে আসে এবং মুক্তির গান গেয়ে ও শ্লোগান দিয়ে বিশ্বকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে বলে। এতে কয়লার রূপক অর্থে কালো চাদর দিয়ে পৃথিবীকে প্রথমে ঢেকে ফেলা হয়, এরপর প্রতিবাদী জনতা সে চাদর ছিন্নভিন্ন করে মুক্ত বাতাসে বের হয়ে আসে এবং মুক্তির গান গেয়ে ও শ্লোগান দিয়ে বিশ্বকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে বলে।
জাতীয় কমিটি ফ্রান্স শাখার পক্ষ থেকে উপস্থতি ছিলেন জাতীয় কমিটি ফ্রান্স শাখার আহ্বায়ক ফাহাদ রিপন, সদস্য সচিব রাকিবুল ইসলাম, সদস্য আহাম্মেদ আলী দুলাল, তপু বড়ুয়া ও ইয়াসমিন আক্তার।
উক্ত আয়োজনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ক্লোমেন্স দুবোয়া, ব্রেট ফ্লেইসমেন এবং আরো অনেকে। গত এক সপ্তাহ ধরে নানা প্রস্তুতি এবং রিহার্সালের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজন সফল করা হয়।