সুনন্দন বড়ুয়া (ফ্রান্স) প্যারিস থেকে:

জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ‘ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ অংশ নিতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বর্তমানে প্যারিস অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার স্থানীয় সন্ধ্যা ৮টায় প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে এমিরেট্স এয়ারলাইন্স একটি ফ্লাইটে প্যারিসের চার্লস দ্য গুল বিমানবন্দরে পৌঁছায়। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী প্যারিসের হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল লো গ্রান্ডে আসেন রাত ৯: ১০ মিনিটের পৌছান। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ওয়ান প্ল্যানেট সামিটে’ অংশ গ্রহন করেন তার প্রদত্ত ভাষণে বলেন, মিয়ানমার থেকে বাসস্থানচ্যুত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবিক কারণে আমরা কক্সবাজারে ১ হাজার ৭৮৩ হেক্টর বনভূমির উপর তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছি। বনায়ন হুমকির মুখে পড়েছে ওই অঞ্চলে।
রোহিঙ্গা সংকট আমাদের বন ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, যদিও এই ঝুঁকির জন্য আমরা দায়ী নই। তিনি বলেন, আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি প্রশমন ও অভিযোজন করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রণীত টেকসই উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় জিডিপি’র ১ শতাংশ ব্যয় করে আসছে।
সকল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশ কর্মকাত্তা ওয়াটার সাসটেইনেবিলিটি ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় আশিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রদান , কুটনীতিবিদ পরিবেশবিদ ও সংগঠনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তনি গতেরেস ,বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইং কিম ও ফরাসি বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের শুরুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মেক্রোনের স্বাগত বক্তব্যে বিশ্ববাসীকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তাঁর অঙ্গীকারের কথা পুনরায় উল্লেখ করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষায় ৫০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে একটি বিশাল প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকার জনগণকে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভাঙন এবং লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষায় সবুজ বেষ্টনি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমি এসব এলাকায় বনায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে বনায়ন ২ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে। ফলে বিদ্যমান বনভূমি ২২ শতাংশ থেকে প্রায় ২৪ শতাংশে উন্নীত হবে।
শেখ হাসিনা জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারপূরণ এবং ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। দিনের শেষ সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্স প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনায় অংশগ্রহন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করেন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পে ড মোহাম্মদ ইউনুস যে বাধা প্রদান করেছিলেন তাও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। একইসাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খালেদা পরিবারের অর্থ পাচারের বিষয় উল্লেখ করেন।
আগামী নির্বাচন সন্নিকটে উল্লেখ করে সবাইকে সকল ভেদাভেদ ভুলে সরকারের উন্নয়ন সবার কাছে তুলে ধরার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌছালে নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহ শ্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।এ সময় ফ্রান্স আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান মঞ্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী উপস্থিত ছিলেন।