হতদরিদ্রের ১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি!

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:০৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


একজনের কার্ডের নাম ও নং ফ্লুইড দিয়ে মুছে অপরজনের নাম ও নং বসিয়ে ২০ কিস্তুির স্থলে এক কিস্তি চাউল দেয়ার কার্ড।

আনোয়ার হোছাইন, ঈদগাঁহ:
কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে হতদরিদ্রদের ১০ টাকার চাল নিয়ে চরম অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।  চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বারবার ডিলারকে সতর্ক করলেও তা তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ অনিয়ম করে যাচ্ছে।
অভিযোগে জানা যায়, ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৫,৬,৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ডিলার হচ্ছে মেসার্স ছমুদা এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃজিয়াউল হক শিশু।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যতা বিমোচনের লক্ষ্যে হতে দরিদ্রদের মাঝে নামে মাত্র ১০ টাকা মূল্যে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাউল বিতরণ করে আসছে এ প্রকল্প শুরুর পর থেকে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান যথাযথ প্রক্রিয়ায় এসব উপকারভোগি বাছাই করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিনামূল্যে কার্ড ইস্যু করে। ওই কার্ডের মাধ্যমে উপকারভোগিরা দায়ীত্বপ্রাপ্ত ডিলারকে কার্ড প্রদর্শন করে স্বাক্ষর কিংবা টিপসহি দিয়ে চাল সংগ্রহ করে।
৭ নং ওয়ার্ড ঘোনারপাড়ার অসংখ্য উপকারভোগি জানিয়েছে, সরকার যখন থেকে এ চাউল বিতরণ শুরু করে তখন থেকে ডিলার ছমুদা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হক মিশু প্রথম দিকে দুই এক মাস নিয়মিত চাউল দিলেও কৌশলে কার্ডটি প্রয়োজন বলে হাতিয়ে নেয়।
পরে প্রতি কার্ড পিছু অফিস খরচ বলে ৫ শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। ওয়ার্ডের ৪০ জন উপকারভোগির মধ্যে বর্তমানে ২০ জনের কার্ড ডিলার জিয়া ১/২ বছর যাবত রেখে দিয়েছে। এমনকি তাদের চাউলও দিচ্ছে না। চাউল কিংবা কার্ড দাবি করলে সে উল্টো কার্ড নেয়ার কথা অস্বীকার করেন।
উপকারভোগিরা তাদের সমস্যা মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানালে তারা ডিলারকে সতর্ক করেন। তাতে তোয়াক্কা না করে উল্টো তাদের বিষয়ে নানা খারাপ মন্তব্য করে বলেও ভুক্তভোগীরা জানান।
বিশেষ করে সম্প্রতি যে নতুন উপকারভোগি বাছাই হয়েছে, তাদের জন্য দুই মাসের চাউল ডিলারকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করে। কিন্তু ডিলার জিয়া মেম্বার চেয়ারম্যানদের অগোচরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা থেকে রহস্যজনক ভাবে কার্ড সংগ্রহ করে কার্ড পিছু ৫শ থেকে ৮ শ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের ১ মাসের চাউল ৩০ কেজি ওজনের একটি বস্তা দিলেও কার্ডে ২ মাসের স্বাক্ষর ও টিপসহি নেয়।এমনকি তাদের মেম্বার-চেয়ারম্যান কিংবা সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা জানতে চাইলে দুই মাসের চাউল দেয়া হয়েছে বলার জন্য শিখিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন এমন নতুন ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭ নং ওয়ার্ড ঘোনা পাড়ার রাজিয়া বেগম, স্বামী জসিম উদ্দিন কার্ড নং-৪৮১, শানু বেগম-স্বামী আব্দুর রহিম, হোসনে আরা স্বামী রহিম উল্লাহ , রহিমা খাতুন স্বামী মৃত জামাল হোছেন। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নতুন কার্ডের জন্য ৫শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত নিয়ে তাদের কার্ড দেয় বলে সরাসরি প্রতিবেদককে জানান।এছাড়া পুরাতনদের মধ্যে একই ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে আবদুল হোসেন কার্ড নং ৫১৭,কালা মিয়ার ছেলে এরশাদুল হক কার্ড নং ৫২৫,ছব্বির আহমদের ছেলে জয়নাল উদ্দিন কার্ড নং ৫২৬, ছায়ের মোহাম্মদের স্ত্রী মমতাজ বেগম কার্ড নং ৫০৩,আবদুল আজিজের স্ত্রী জাহানারা বেগম কার্ড নং ৫০৪, মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী ফরমুজা বেগম ও আলী হোসনের স্ত্রী মনজুরা বেগম কার্ড নং ৪৯৩ জানান, তারা ২০১৬,১৭,১৮ সাল থেকে উপকারভোগী কার্ড পেলেও ৫শ থেকে ৮ শ টাকার বিনিময়ে ডিলার থেকে কার্ড নিতে হয়েছে।প্রথম দিকে এক দুই মাস পেলেও এরপর উক্ত ডিলার প্রয়োজন বলে কার্ড নিয়ে ফেলে।এরপর থেকে আর কোন চাউল কিংবা কার্ড তাদের দেয়নি। চাউল চাইলে উল্টো কার্ড দিলে চাউল পাবে বলে শাসায়।
ঘটনা জানাজানি হলে দু’য়েক জনকে ডেকে কার্ড দিয়ে অতি সম্প্রতি এক বস্তা চাউল দিয়ে কার্ডটি দিয়ে দেয়।
কার্ডে দেখতে পায়, কার্ডে প্রতি মাসে চাউল সংগ্রহের টিপসহি রয়েছে। অথচ তারা কোন চাউল পায়নি।পুরাতনের মধ্যে আলী হোসনের স্ত্রী মনজুরা এবং তার ছেলে খলিল জানায়,তার নামে কার্ড ইস্যুর পর থেকে মাত্র ১/২ বার চাউল পেয়েছেন। এরপর আর পাননি ।
সম্প্রতি এ ঘটনা জানাজানি হলে তার ছেলেকে ডেকে এক বস্তা চাউলসহ কার্ডটি দেয়।কিন্তু কার্ডে প্রতিমাসে চাউল নেয়ার টিপসহি রয়েছে।সবচেয়ে বড় অনিয়ম ধরা পড়ে রহিমা আক্তার স্বামী ফরিদুল আলম কার্ড নং ৪৭৯।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে চাউল নিয়ে ফেরার পথে এ প্রতিবেদকের সামনে পড়ে। তার কাছে থাকা কার্ডে দেখা যায়, পুরো কার্ডের লিখা কাটা ছেঁড়া এবং ফ্লুইড দিয়ে মুছে অন্যের কার্ডে তার নাম ও নং বসিয়ে এক বস্তা চাউল দেয়া হয়েছে। তার কাছে জানতে চাইলে বলে, সে আজকে টাকা দিয়ে প্রথম কার্ড এবং চাউল পেয়েছে এবং দু’টি টিপসহি নিয়েছে।
অথচ কার্ডে দেখা যায়, ২০ কিস্তি চাউল পূর্বে দেয়া হয়েছে।
এভাবে দিনের পর দিন ডিলারের চরম অনিয়ম ও আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার সিরাজুল হক ও চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
তারা বলেন, ডিলারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সে এভাবে অনিয়ম করে চলছে।প্রতিবাদ করলে নানাভাবে হয়রানির হুমকি দেয়।এমনকি তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা । যার প্রমাণ হচ্ছে চেয়ারম্যান মেম্বারদের অগোচরে সে কিভাবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ থেকে উপকারভোগি কার্ড সংগ্রহ করে এবং প্রতি বস্তায় ৫/৬ কেজি করে চাউল কম দিয়ে আসছে শুরু থেকে?
চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার আরো জানান, চেয়ারম্যানের অগোচরে উপজেলা থেকে উক্ত ডিলার কিভাবে উপকারভোগীদের কার্ড গোপনে সংগ্রহ করে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে টাকা আদায় করে এবং একই কার্ড ডিলার এবং চেয়ারম্যানকে পৃথকভাবে দেয় এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
তিনি জানান,৭ নং ওয়ার্ডসহ অন্য ওয়ার্ডের সকল উপকারভোগিকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে এ ডিলারের হয়রানি ও আত্মসাতের গোপন রহস্য সহজেই বেরিয়ে আসবে। তাই তিনি উর্ধতন কর্মকর্তার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা দেব দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দায়সারা ভাবে উত্তর দেন এবং কার্ড সরবরাহের বিষয়ে চেয়ারম্যানের কোন ভুমিকা নেই বলে দাবি করেন। এ অনিয়মের বিষয়ে ইউনিয়ন টেগ কর্মকর্তা মান্নান ভাল জানবেন বলে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন দেবদাস।
এ বিষয়ে উপজেলা কতৃক ভারুয়াখালী ইউনিয়নের দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মান্নানের মোবাইলে বারবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযুক্ত ডিলার মোঃ জিয়া উল হক মিশুর বক্তব্য জানতে বারবার কল দিলেও মোবাইল কল কেটে দেন।