ডেস্ক নিউজ:

চট্টগ্রামের মিরসরাই আসনে (চট্টগ্রাম-১) বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। কিন্তু একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিজের বাবাকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি প্রচারের পরপর তা ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। সারাদেশে ভিডিওটি সৃষ্টি করেছে ব্যাপক চাঞ্চল্যের।

ফেসবুক ভিডিও বার্তায় নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, ‘আমি নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। কিছু কথা বলার জন্য আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমার বাবা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। আমি একমাত্র ছেলে হিসেবে আপনাদেরকে বলছি, আমার বাবাকে আপনারা ভোট দেবেন না। আমি আবারও বলছি, আপনারা আমার বাবাকে ভোট দেবেন না। আমি কেন বলছি সেটা আমি একটু আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিত শেয়ার করি।’

‘আমাদের পুরো পরিবার এবং আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এ জীবনটা পার করেছি। বিএনপির মতো একটি সর্বহারা দল, বিএনপি-জামায়াত জোটের মতো জঙ্গি এবং মানুষ পোড়ানোর যে একটা জোট, সে জোটে আমার বাবার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা রিপ্রেজেন্ট করছে- এটা আমার নিজের কাছে খুব একটা লজ্জা অনুভূত হচ্ছে।’

‘আমি একটি জিনিস বলতে চাই, শুধু লন্ডন কানেকশন থাকলে, লন্ডনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে যে নমিনেশন পাওয়া যায়, এটি একটি উদাহরণ। চট্টগ্রাম-১ এর মিরসরাইয়ের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা বিএনপি-জামায়াতকে, ধানের শীষকে এবং আমার বাবাকে বর্জন করুন এবং মিরসরাইতে নৌকার মনোনীত প্রার্থীকে জয়যুক্ত করুন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পুনরুজ্জীবিত করতে আমরা সবাই একসাথে কাজ করি। আমরা চাই এ দল, এ জোট যেন বাংলাদেশের কোনো জায়গায় রিপ্রেজেন্ট করতে না পারে।’

এদিকে নিজের মুক্তিযোদ্ধা বাবার বিরুদ্ধে ছেলের এমন কাণ্ডে হতবাক চট্টগ্রামের জনগণ। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগে নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্যই জন্মদাতা বাবার বিরুদ্ধে এলিট ভিডিও বার্তা ছড়িয়েছেন। বার্তায় বাবার বিরুদ্ধে এলিটের বক্তব্য মূলত একধরনের ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি দেখা হয়েছে তিন লাখ সাত হাজার বার। এক হাজার নয়শজন কমেন্ট করেছেন, যাদের বেশিরভাগই এলিটকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এছাড়া ভিডিওটি ১৩ হাজার ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন।

জমির উদ্দিন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যেই ছেলে তার জন্মদাতাকে সবার সামনে বেইজ্জতি করতে পারে সেই ছেলে আর মানুষের কাতারে নাই, সে অতি আওয়ামী লীগ!!!, কুলাঙ্গার।’

শাহাদাত নামে একজন লিখেছেন, ‘অন্যায় করলেন, আপনার চুপ থাকা দরকার ছিল। আপনার বাবা পাগল নন বা আপনার জ্ঞান এখন তার দরকার নেই। আপনার বাবা যা ভালো মনে করবেন তিনি সেটা করতে পারেন। আপনার উচিত উনার কাছে ক্ষমা চাওয়া। ভাই, দুনিয়া খুব ছোট, উনার আগে আপনিও এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সত্য বিচারে তিনি তার বুদ্ধিতে যদি এটা করে থাকেন, তবে আপনার অসুবিধা কোথায়? প্রয়োজনে আপনিও আপনার মতো নির্বাচন করুন। মানুষ আপনি বা আপনার বাবা যাকে খুশি বেছে নেবে।’

মো. হালিম নামের একজন লিখেছেন, ‘হায়রে রাজনীতি! যে রাজনীতি বাপ-ছেলের মধ্যে বিভক্তি এনে দেয়, তা কখনোই জনকল্যাণকর রাজনীতি হতে পারে না। এটা নেহাত স্বার্থান্বেষী রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ বিষয়ে জানতে নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের বাবা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ দেশের অন্যতম সেরা অটোমোবাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠান বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আর ছেলে একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ভাবে বাবা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং এবার চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিপরীতে একই আসনে নৌকার মাঝি হতে চাইছেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন।