মোঃ ফারুক, পেকুয়া :

দেশ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় অবিরাম ছুটে চলা এক বাহিনীর নাম ‘বাংলাদেশ পুলিশ’। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করেন না। কিছু ব্যতিক্রম ব্যক্তি ছাড়া শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ পর্যন্ত যতেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা।

সুনাম অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপপন করলেন, পেকুয়া থানা থেকে বদলী হওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল চন্দ্র রায়। সর্বসাধারণকে ভালবাসা দিয়ে নিয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষের দোয়া। পেকুয়াবাসী তার এ ভালবাসা মনে রাখবে আজীবন। ভিন্ন জেলার মানুষ হলেও আপন করে নিয়েছিলেন পেকুয়াবাসীকে। সুঃখ দুঃখের ভাগিদার হয়ে অসহায় আর নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দিয়েছেন সৎ পরামর্শ। আর্থিক লোভলালসার উর্ধ্বে ওঠে অপরাধ দমনে ভূমিকা রেখেছে নিজ জন্মভূমির ভুমিকায়।

উপ-পরিদর্শক(এসআই) বিপুল চন্দ্র রায়। নরসিংদী জেলার পলাশ থানার লক্ষীনারায়নের পুত্র। ২০১২ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। ২০১৫সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে বদলী হয়ে যোগদান করেছিলেন পেকুয়া থানায়। যোগদান পরবর্তি প্রায় ৩বছর সময় পেকুয়ায় দায়িত্বপালন করেন। এ সময়ে কয়েকজন পরিদর্শকদের সাথে সুনামের সাথে দায়িত্বপালন করায় পরিদর্শক বদলী হওয়ার সময় তার ভালকাজের প্রশংসাপত্র দিয়ে যান। সর্বশেষ পেকুয়া থানায় সদ্য যোগদান করা পরিদর্শক জাকির হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বিপুল চন্দ্র রায় খুব ভাল মনের অধিকারী একজন পুলিশ সদস্য। একটানা পেকুয়ায় কাজ করায় প্রশাসন নিয়মিত বদলীর অংশ হিসাবে তাকে বদলী করা হয়েছে। আমার জানামতে একজন এসআই কোন এলাকায় এতদিন কাজ করতে পারেনি। যারাই আমার সাথে সাক্ষাত করতে আসে, তারাই বলে বিপুল চন্দ্রকে রেখে দেওয়ার জন্য। আমি শতচেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ভুলত্রুটির উর্ধ্বে তিনি আইনের শাষন প্রতিষ্টা করতে ভূমিকা রাখায় আমরা গর্বিত। এলাকাবাসীর ভালবাসায় সেই অনেক উপরে ওঠবে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পেকুয়ায় অবস্থানকালে স্থানীয় মানুষের সাথে গড়ে তুলেন সৌহর্দ্যপূর্ণ সম্পূর্ক। ভালবেসে আপন করে নেন পেকুয়াবাসীকে। চাকরি করতে গিয়ে যেমন অপরাধকে আড়াল করেনি তেমনি অসহায় ও নিরপরাধ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছেন সবসময়। যার কারণে পেকুয়াবাসীর আপমর জনগণের কাছে ঘরের ছেলে হিসাবে পরিচিতি অর্জন করেন। যতই রাত হউক তাকে ফোন করলে সাড়া দিয়েছেন। বিনাশর্তে ছুটে চলেছেন প্রত্যন্ত এলাকায়। এছাড়াও মাদক, অস্ত্র ও অপরাধীদের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। শত প্রভাবশালী মানুষের চাঁপকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসায় কিছু মহল তার প্রতি ঈর্ষান্বিতও হয়েছিল। তারপরও তাকে দমাতে পারেনি তার কর্মের গন্তব্য থেকে। যার কারণে সর্বশ্রেণীর মানুষের ভালবাসায় শিক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন।

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার ভালবাসার প্রমাণ দিচ্ছেন। আরমান বিন কাশেম লিখেছেন, আপনাকে মিস করবো, আপনি পেকুয়া মানুষদের যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তা পেকুয়াবাসী সারাজীবন মনে রাখবে। ভালবাসা অবিরাম। রেজাউল করিম রেজভি লিখেছেন, শুভকামনা রইল, তবে পেকুয়া থানায় আপনার শূন্যতা যেন আরেকজন বিপুল রায় দিয়ে পূর্ণ হয়। মোঃ জাকারিয়া লিখেছেন, আমার দেখা কর্মনিষ্ট সৎ পুলিশ অফিসার এরপরও তার একটি আলাদা পরিচয় আছে তিনি সাদা মনের মানুষ। মনছুর আলম নানক লিখেছেন, যেখানে যাবেন ভাল থাকবেন বিপুল দা, আপনাকে খুব মিস করবো। পেকুয়ায় আপনার নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতা আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবে। হিজবুল্লাহ লিখেছেন, পেকুয়াবাসী আপনার অনুপস্থিতি খুব স্বরণ করবে। মোঃ মঈন লিখেছেন, আপনাকে খুব বেশি ভাল লাগে। ভালো লাগাটা শুরু আপনার সততা ও দক্ষতার মধ্য দিয়ে। বেলাল উদ্দিন বিল্লাল লিখেছেন, বিপুল দাদা আপনি এভাবে চলে যাবেন তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভালো রাখুক।

বিপুল চন্দ্র রায় তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পেকুয়াবাসীর সাথে ৩বছর সুঃখে দুঃখে পাশে ছিলাম। নিজের পরিবারের লোক হিসাবে পেকুয়াবাসীর গ্রহণ করে নিয়েছিল। যে ভালবাসা পেয়েছি তা কোনদিন ভুলতে পারবো না। কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও নিজ থেকে চেষ্টা করেছি কর্ম সবকিছুর উর্ধ্বে রাখতে। পেকুয়াবাসীকে মিস করবো সবসময়। যেখানে থাকিনা কেন পেকুয়াবাসীর জন্য আমার দোয়া ও ভালবাসা সবসময় থাকবে। আর পেকুয়াবাসীর দোয়া ও ভালবাসা নিয়ে জীবনকে সাঁজাতে চাই।