ডেস্ক নিউজ:
মিলা রহমান। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিক রায়হানের সঙ্গে তার দুবছরের প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু সম্পর্কের এক পর্যায়ে মিলা জানতে পারে অনিক মাদকাসক্ত। মিলা অনিককে ওই পথ থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে বলে। শেষপর্যন্ত বিভিন্ন জটিলতায় সম্পর্কের ইতি টানতে চায় মিলা। কিন্তু অনিক হয়ে ওঠে হিংস্র। মিলার সঙ্গে কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ফেসবুকের ইনবক্সে পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া শুরু করে।
দশম শ্রেণির ছাত্রী নিশিতা চৌধুরী। দুবছর আগে ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলে। গত কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে একাধিক অ্যাকাউন্ট।
এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে আমাদের চারপাশে। সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে মূলত নারীর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন থানা ও দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে যে ৭৩ শতাংশ সাইবার অপরাধ ঘটনার শিকার নারী। সাইবার অপরাধীর বিচারে দেশে কঠিন আইন রয়েছে। যদিও আইনটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৬ পাস না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান আইনেই এর বিচার হবে। আর এ আইনের নাম হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)।
কোনগুলো সাইবার অপরাধ : ফেসবুকে বা কোনো গণমাধ্যমে কাউকে নিয়ে মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক কিছু পোস্ট করলে, ছবি বা ভিডিও আপলোড করলে, কারো নামে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তমূলক পোস্ট দিলে। এ ছাড়া মোবাইল নাম্বার ছড়িয়ে দেওয়া, ফটোশপের মাধ্যমে বিকৃত ছবি তৈরি করে অনুমতি ছাড়া অন্যত্র ছবি ভিডিও ও মেসেজের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দেওয়া এ সবই সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়ে। এ ছাড়া অনলাইনে যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত হলে তাও সাইবার অপরাধ।
রয়েছে আইনি ব্যবস্থা : সাইবার অপরাধের শিকার হলে প্রথমত থানায় জিডি করতে হবে। অভিযোগ জানাতে পারেন র্যাবের কাছেও। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন ওমেন সাপোর্ট ডিভিশন, জাস্টিস ফর ওমেনসহ বিভিন্ন সংস্থায় অভিযোগ করা ও মামলা করা যেতে পারে। সাইবার ক্রাইমের জন্য সর্বনিম্ন দুই মাস ও সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-ের এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান আছে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য অভিযোগ জানাতে পারেন এই ০১৭৬৬-৬৭৮৮৮৮ নম্বরে।
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, আমাদের দেশে সাইবার অপরাধের শিকার মেয়েরা অনেকক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে দ্বিধা করে। তা ছাড়া অপরাধটা যদি হয় যৌন হয়রানি বা হেনস্থার তাহলে তারা সামাজিক মর্যাদাহানির ভয়ও করেন। বিষয়টি নিয়ে পরিবারে আলোচনা করতে হবে। কিছু বিকৃত রুচির মানুষের জন্য শুধু বাস্তব জীবনেই নয়, ইন্টারনেটে হয়রানির শিকার হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ভুগতে হচ্ছে বহু নারীকে। অনেকে বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ। আইনে এই অপরাধের কঠিন শাস্তি রায়েছে। রুখে দাঁড়াতে হবে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধসমূহ স্পষ্ট ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে এই আইনের খসড়ার ‘গোপনীয়তা লঙ্ঘনের শাস্তি’ (১৭) এবং ‘পর্নোগ্রাফি, শিশু পর্নোগ্রাফি এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ’ (১৮) ধারা দুটি সাইবার অপরাধে নারীকে সুরক্ষা দেবে বলে মনে করা যায়। তবে এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত শাস্তি আরও বাড়ানো যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।