মুহাম্মদ হোসাইন,কক্সবাজার

আরকান রাজ্যটি এখন সত্যিকারের মগের মল্লুকে পরিণত হয়ে সর্বধর্মের অনুসারীরা মিয়ানমার সরকারের রোষানলে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে বিশেষজ্ঞ মহলরা বলছেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আরকানের সাতলাখ রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের আট শতাধিক পরিবারও মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়েছে। কিন্তু শান্তির নোবেলটি কার হাতে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন সর্বমহলে প্রতিনিয়ত উত্থিত হচ্ছে। • কেন তাদের কাছে ভিন্ন ধর্মের লোকজন নিরাপদ নয়? এটাকি জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে সেই ১৯৬২ সালে সামরিক জান্তা বাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরে যে নির্যাতনের মাত্রা মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর শুরু করেছিল তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হয়ে উঠছে না অন্য মনস্ক? গত ২৪ আগষ্ট আরকানের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের সরকারী নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ইস্যু তৈরিকরে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী পুরো আরকান রাজ্যে মুসলিম এবং হিন্দু পরিবার গুলোকে উচ্ছেদ করার্থে নারী-পুরুষ ,শিশুদের প্রকাশ্যে গুলিকরে হত্যা করে যাচ্ছে। এমনকি আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি পুঁড়ে দেওয়া, ক্ষেতখামার নষ্ট করে দেওয়া, জীবিত মানুষদের আগুনে পুঁড়ে মারা, যুবতি নারীদের গণধর্ষণের পর হত্যাকরাসহ নানাবিধ অসহনীয় নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় এসবের দেখা মিলেছে। এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞকে বিশ্ব-মানবাধিকার কর্মীরা গণহত্যা বলে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র দিয়েছে তারপরেও সেখানকার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন কোনভাবে থামছেনা এতে প্রাণভয়ে সীমান্তের দিকে পালাচ্ছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। যদিও বিষয়টি নিয়ে শান্তিতে নোবেল অর্জনকারিরা উদ্বিগ্ন হয়েছেন তবে মিয়ানমারের শান্তির কর্ণধার বলে খ্যাত অংসান সুচি একবারের জন্যও এই বরবর্তম সেনাবাহিনীর হামলার নিন্দা প্রকাশ করেনি। এমতাবস্থায় এসব অসহায় নির্যাতিত লাখ লাখ অভুক্ত নারী-পুরুষ, শিশু -বৃদ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সর্বশ্রেণীর লোকজন এবং সরকার। এমনকি প্রতিদিন বিভিন্ন লোকজন ও সংগঠন তাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে ছুঁটছে। বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের এমন উদার মনোভাবের কারণে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় পৃথিবীর আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনাবলি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এবারের শান্তির নোবেলটি বাংলাদেশকে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার সাঈদ। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম সুত্রধরে তিনি বলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত আট শতাধিক হিন্দু আরকান ছেড়ে বাংলাদেশের উখিয়ায় অবস্থান নিয়েছেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের মতো তারাও নৃশংসতার স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে আসছেন বলে জানালেও কিছু সূত্রে ভিন্ন তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, সৈন্যরা হিন্দু যুবকদের রাখাইন যুবকদের সাথে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও জবাইয়ে অংশ নিতে বাধ্য করছে। আর কেউ তাতে রাজি না হলেই তাকে হত্যা করছে। তিনি আরো বলেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, রাখাইন রাজ্যেও মংডু জেলার গ্রাম ফকিরা বাজার, রিকটা, চিয়ংছড়িসহ কয়েকটি এলাকায় অন্তত ৮৬ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই যুবক। আরো অনেকে ইতিমধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে। এদের একটি অংশ কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের লোকনাথ মন্দির ও তৎসংলগ্ন একটি ফার্মের খালি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। আরো শতাধিক হিন্দু পরিবার সীমান্তের ওপারে কাছাকাছি এলাকায় আটকে আছে। এদিকে বকুলবালা নামে এক হিন্দু শরণার্থী বিবিসিকে জানান, ফকিরাবাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চিকনছড়িতে ছিল তার বাড়ি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন ফকিরাবাজারে। তার স্বামী মেয়েকে দেখার জন্য ফকিরাবাজার যান। সেখানে তার স্বামী, মেয়ে এবং নাতি সবাই নিহত হয়েছে। সেখানে সব মানুষকে কেটে ফেলেছে। সেখানে আমার মেয়েকে কেটে ফেলেছে। আমার মেয়েকে দেখতে গিয়েছিল আমার স্বামী। আমার স্বামীকেও কেটে ফেলেছে। আমার নাতি ছিল। তাকেও কেটে ফেলেছে।