শীর্ষ নেতারা জানান, প্রায় অর্ধশতাধিক এমপি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। আবার শেষ মুহূর্তে তারা দলের জন্য ভালো কাজ করলে অথবা জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে হয়তো দলের টিকিট পেয়েও যেতে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় বিভিন্ন মাধ্যমে এলাকায় এমপিদের অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে দলের শীর্ষ পর্যায়। এসব প্রতিবেদনে বেশ কিছু সংসদ সদস্যের দুর্নীতি, তাদের পরিবারের সদস্যদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। কোনো কোনো এমপি’র বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে খোঁজখবর নিয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন দলের সিনিয়র বেশ কয়েক এমপি।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাইবান্ধা, যশোর, খুলনা, রাজশাহী, লক্ষ্মীপুর জেলার সিনিয়র এমপিদের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন দলীয় সভাপতি। এদিকে সম্প্রতি কুমিল্লা ও রাজধানীর বেশ কয়েকটি দলীয় কর্মসূচিতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিতর্কিত ও জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য কোনো ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবে না।

দলের একাধিক নেতা জানান, নানা সময় গণমাধ্যমে যেসব এমপিদের বিতর্কিত কাজ নিয়ে নাম এসেছে, তাদের মনোনয়ন নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন, কক্সবাজারের টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। দলের নেতা হত্যা মামলায় টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খানও এখন কারাগারে। এছাড়াও রয়েছে, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি বজলুল হক হারুন, চট্টগ্রামের বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এমএ লতিফ, ঢাকা-১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমান এনাম, খুলনা-১ আসনের এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ননী গোপাল মণ্ডল, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাছানুর রহমান রিমন, খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণচন্দ্র চন্দ, পিরোজপুর-১ আসনের একেএমএ আউয়াল, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার রায়, চাঁপাই নবাবগঞ্জ-১ আসনের গোলাম রব্বানী, রাজশাহী-৪ আসনের মো. এনামুল হক, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলামসহ দিনাজপুর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ঢাকা, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামের এক বা একাধিক আসনে নতুন প্রার্থী আসতে পারে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুরের কয়েক সিনিয়র এমপিকে হয়তো আগামী নির্বাচনে দলীয় টিকিট দেয়া হবে না। এদিকে নির্বাচনে আগে তিন মাস পর পর জরিপ চালানো হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য আসনভিত্তিক জরিপের কাজ প্রায় শেষ করেছে দলটি। কোন এলাকায় কার অবস্থান ভালো সে বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এটি এখন নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ কারণেই আসনভিত্তিক শক্তিশালী প্রার্থী আগেভাগেই ঠিক করতে চায় দলটি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আরো পরে। এখন প্রতিটি আসনেই দল পছন্দের প্রার্থীর পাশাপাশি এক বা একাধিক বিকল্পও ভেবে রেখেছে দলটি।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই আওয়ামী লীগ তাদের ২০তম সম্মেলন শেষ করেছে। নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশব্যাপী ঘুরে নির্বাচনী আবহ  তৈরি করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সাংগঠনিক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানও করছেন। তাই উন্নয়নের সাফল্যকে ম্লান করে দিতে পারে নেতাকর্মীদের এমন নিন্দিত কাজগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কঠোরভাবে। এছাড়া সম্প্রতি এগারতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ এলাকায় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন ১৪ জন স্বতন্ত্র এমপি। এসব এমপিদের আসনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোনয়ন পাওয়া হবে কঠিন। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র এমপির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, রাজনীতি করে, নির্বাচন করে জনগণের ভোটে এমপি হয়েছি। দলের শীর্ষ নেতারা আমাদের ভূমিকা ও জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। নির্বাচনের আর খুব বেশি দেরি নেই। এখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। অন্যদের মতো আমাদেরও প্রত্যাশা রয়েছে দলের মনোনয়ন পাওয়ার।

সুত্র: পূর্ব পশ্চিম বিডি