পেকুয়া প্রতিনিধি;
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবনিয়া সেগুনবাগিচা এলাকার জসিম উদ্দিন (৫৭) হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে—স্ত্রী সেলিনা আক্তার ও তার পরকীয়া প্রেমিক মিলে পরিকল্পিতভাবে জসিমকে হত্যা করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে স্ত্রী সেলিনা নিজেই বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় দুইজনকে আসামি করে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে পুলিশ গভীর তদন্তে নেমে পরকীয়া প্রেমিক আব্দু রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করলে হত্যার আসল রহস্য উদঘাটিত হয়।
চলতি বছরের ১০ আগস্ট গভীর রাতে নিজ বাড়িতে খুন হন জসিম উদ্দিন। তিনি ওই এলাকার মো. নুর আহমদের ছেলে। ঘটনার পরদিন স্ত্রী সেলিনা পেকুয়া থানায় মামলা করেন (মামলা নং ০৮/২৫)। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে দুই প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করলেও পরে এলাকাবাসী অভিযোগ তোলেন- আসল হত্যাকারীদের আড়াল করতে নিরপরাধদের ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা মানববন্ধনও করেন। এর পর থেকেই সেলিনা গা-ঢাকা দেন, এমনকি বাড়ি থেকে গরু ও মালামাল সরিয়ে নেওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
নিহতের পিতা নুর আহমদ এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নতুন মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং ২১৯৮/২৫)। আদালতের নির্দেশে পেকুয়া থানায় নতুন মামলা রুজু হয় (মামলা নং ১৭/২৫), যেখানে আসামি করা হয় সেলিনা আক্তার, তার প্রেমিক আব্দু রাজ্জাক ও জামাল উদ্দিনকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেলিনা ও তার ছেলের বন্ধু আব্দু রাজ্জাকের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরে জসিম স্ত্রীকে সতর্ক করেন এবং রাজ্জাককে বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুজন মিলে প্রতিশোধ নিতে জসিমকে নৃশংসভাবে খুন করেন।
নিহতের পিতা আরও জানান, আব্দু রাজ্জাক একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, যিনি পূর্বে একটি হত্যা মামলায় পলাতক ছিলেন এবং পাহাড়ি এলাকায় অবস্থানকালে সেলিনার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান।
পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুনয়ন বড়ুয়া বলেন, “হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে। গ্রেপ্তার আব্দু রাজ্জাক হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সেলিনা আক্তারকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
