পেকুয়া প্রতিনিধি:
স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন, জবাবদিহিমূলক শাসন ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের পেকুয়ায় অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট পরিকল্পনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন উপজেলার ২৪ জন তরুণ ও উদ্যমী স্বেচ্ছাসেবক, যাঁরা ইউনিয়ন পর্যায়ে সামাজিক পরিবর্তন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্রকল্পই টেকসই হয় না—এই উপলব্ধি থেকেই ‘ভয়েস ফর চেইঞ্জ: এমপাওয়ারিং সিটিজেনস ফর ইনক্লুসিভ গভর্নেন্স, সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে আন্তর্জাতিক দুই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা—সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোঅপারেশন (SDC) এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা (GAC)।
প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি শনিবার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত পেকুয়া উপজেলা কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনটি বাস্তবায়ন করে খ্যাতনামা উন্নয়ন সংস্থা খান ফাউন্ডেশন।
প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সভা ও স্থায়ী কমিটির কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক করার পাশাপাশি বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা হাতে-কলমে শিখেছেন ইউনিয়ন পরিষদের বার্ষিক ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কাঠামো, ওয়ার্ড সভা আয়োজন ও সঠিকভাবে পরিচালনার কৌশল, বাজেট প্রণয়নের ধাপ ও জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ, কর নির্ধারণ ও আদায় প্রক্রিয়া, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্তিকরণ বান্ধব বাজেট পরিকল্পনা, আয় ও ব্যয়ের উৎস শনাক্তকরণ, হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষার মৌলিক দিক।
প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খান ফাউন্ডেশনের জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবু ছালাম, প্রকল্প কর্মকর্তা বেদেনা খাতুন ও শামীমা ইয়াসমীন।
আবু ছালাম বলেন,“স্থানীয় উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো জনগণ। তাঁদের সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন পরিকল্পনা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় দক্ষ করে গড়ে তুলছি, যাতে তারা জনগণের চাহিদা ও স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা এ.এইচ.এম. বদিউল আলম। তিনি বলেন,“স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে সমাজের সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। আজকের প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণকারীরাই ভবিষ্যতের পরিবর্তনের দূত হয়ে উঠবেন।”
প্রশিক্ষণে আরও উপস্থিত ছিলেন বারবাকিয়া ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুল বাহার, তিনি বলেন, “প্রশাসনের কাজ শুধু দিকনির্দেশনা নয়, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করাও অন্যতম দায়িত্ব। এ ধরনের প্রশিক্ষণ তৃণমূলে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় ওয়ার্ড সভা আয়োজন, বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ, জনগণের মতামত সংগ্রহ এবং তথ্যভিত্তিক সুপারিশ প্রস্তুত করে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ যে, এই প্রকল্পের আওতায় ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও পৃথক সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার আয়োজন করা হবে।
