পেকুয়া প্রতিনিধি:
দীর্ঘ দুই দশক ধরে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকা কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সড়কটি অবশেষে সংস্কারের উদ্যোগ পেয়েছে। কোনো সরকারি বরাদ্দ নয়—ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সড়ক সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহছান উল্লাহ।
গত রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকে মিজ্জির পাড়া থেকে সাঁকোরপাড় স্টেশনের পুরাতন ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ইট ও বালু ফেলে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। আহছান উল্লাহ জানান, এতে ব্যয় হবে প্রায় এক লাখ টাকা, যা সম্পূর্ণরূপে তার নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয়রাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করছেন।
সড়কটি নিয়ে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও কষ্টের কথা জানালেন পূর্ব মেহেরনামার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “প্রায় ২০ বছর আগে তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ এই সড়কটিতে ইট বিছিয়ে উন্নয়ন করেছিলেন। এরপর আর কোনো সংস্কার হয়নি। এখন ইট উঠে গেছে, খানাখন্দে ভরা, যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটেও চলা যায় না।”
সড়কটির দৈন্যদশার ফলে প্রতিদিন প্রায় ৪-৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন বলে জানান স্থানীয়রা। এ সড়ক দিয়েই সৈকতপাড়া, বলির পাড়া, মুরার পাড়া, আবাসন ও পূর্ব মেহেরনামা এলাকার মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া এই রাস্তাটিই শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়, পহরচাঁদা ফাযিল মাদরাসা, শিলখালী মডেল কেজি স্কুল, এমএস পাবলিক স্কুল ও পূর্ব মেহেরনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থীর একমাত্র যাতায়াত পথ।
আহছান উল্লাহ বলেন, “রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণে। এই এলাকার মানুষ বছরের পর বছর ধরে কষ্টে আছে, অথচ কেউ ফিরেও তাকায়নি। উন্নয়ন না হলেও অন্তত চলাচলের উপযোগী করে তুলতে এই উদ্যোগ। তবে আমাদের দাবী, স্থায়ী ও টেকসই উন্নয়ন। সরকার যেন অন্তত এই সড়কটির প্রতি নজর দেয়।”
তিনি আরও জানান, ওয়াপদা বেড়িবাঁধ থেকে মুবিনের দোকান পর্যন্ত আরও ১৪ চেইনের মতো রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনাও রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি’র সাবেক সদস্য মুহাম্মদ রিদুওয়ান বলেন, “এই সড়কটি শুধু অবহেলিত নয়, বর্ষায় ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণও। ফাঁড়িখাল (বারবাকিয়া খাল) লাগোয়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এই রাস্তা প্রতি বছর পানিতে তলিয়ে যায়। ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। আপাতত এই সংস্কার স্বস্তি দেবে ঠিকই, তবে আমাদের প্রাণের দাবী—স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও পাকা রাস্তা।”
স্থানীয়দের মতে, ব্যক্তি উদ্যোগ যতই প্রশংসনীয় হোক না কেন, এটি স্থায়ী সমাধান নয়। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ, বরাদ্দ এবং টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান হবে না।
