আজিজুর রহমান রাজু, ঈদগাঁও;
ঈদগাঁও উপজেলার গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া নুরুল আমিনের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে স্থাপন করা হলো একটি স্মৃতিফলক। যেন ইতিহাস ফিরে এসে দাঁড়াল শহীদ নুরুলের শৈশবের প্রিয় পাঠশালার আঙিনায়।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্মৃতিফলকটির উদ্বোধন করেন কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ এবং শহীদ পিতা ছৈয়দ নূর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করে তারুণ্যের রক্তস্নাত বীরত্বকে প্রকৃতির ভাষায় অমর করে রাখার প্রতীকী প্রয়াস নেওয়া হয়। এই আয়োজন কেবল একটি নামের স্মরণ নয়, বরং একটি প্রজন্মের আত্মত্যাগকে ভবিষ্যতের চেতনায় রূপান্তরের শপথ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা, ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুদ্দীন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ইলিয়াস মিয়া, সমবায় কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা সরওয়ার কামাল, এমইউপি জুবায়েদ উল্লাহ জুয়েল, গজালিয়া তালিমুল কোরআন দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আমির হোসাইন, জুলাই বিপ্লবের সংগঠক হাবিব আজাদ, শিক্ষক ফরিদুল আলম, ইউনিয়ন ছাত্রশিবির সভাপতি আরিফুল ইসলাম, গজালিয়া ৯নং ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি সাহাব উদ্দিনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
শহীদকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক ছাত্র প্রতিনিধি বলেন, “নুরুল আমিন ছিলেন আমাদের মতোই একজন তরুণ। কিন্তু তার বুক জ্বলে উঠেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, তার কণ্ঠ ছিল স্বাধীনতার ভাষায় পরিপূর্ণ। ২৪ জুলাই তিনি শহীদ হলেও হারিয়ে যাননি—চিরদিনের জন্য বেঁচে আছেন আমাদের চেতনায়।”
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ বলেন, “দেশের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা প্রতিটি শহীদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে স্মৃতিফলক স্থাপন করছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের আত্মত্যাগ জানতে পারে, অনুধাবন করতে পারে।”
শহীদ পিতা ছৈয়দ নূর স্মৃতিচিহ্নটি স্পর্শ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে গেলেও জলে ভেজা চোখে বলেন, “আমার ছেলে এই মাঠেই খেলত, এই স্কুলেই পড়ত। আজ আমি শূন্য, কিন্তু গর্বিত। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি মরার আগে তাদের বিচার দেখতে চাই—এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।”
‘তারুণ্য’র আয়োজনে, “আমার চোখে জুলাই বিপ্লব” শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে এই স্মৃতিফলক স্থাপন কার্যক্রম চলছে।
নুরুল আমিন শুধু গজালিয়ার নয়, তিনি ঈদগাঁওয়ের হৃদয়ে খোদাই হয়ে থাকা এক চিরন্তন নাম। তাঁর আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠুক প্রেরণার দীপশিখা।
