নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–এর ১৬ জুলাইয়ের গোপালগঞ্জের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হামলার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল—এমন অভিযোগ তুলেছে দৈনিক যুগান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ছাত্রলীগ নেতার কাছে অডিও বার্তা পাঠিয়ে এনসিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এমনকি ফেসবুক লাইভে এসে হামলার আহ্বান জানান পলাতক ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের কাছে শেখ হাসিনার পাঠানো অডিও বার্তায় বলা হয়, “ওরা নাকি গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভাঙার হুমকি দিয়েছে। এর আগে ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাবে। তোমরা বসে আছ কেন? প্রতিহত করো। যেন গোপালগঞ্জে কোনোভাবেই তারা ঢুকতে না পারে বা কর্মসূচি পালন করতে না পারে। মনে রাখো—তাদের কেউ যেন অক্ষত অবস্থায় ফিরতে না পারে।”
এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লার কাছেও শেখ হাসিনা অনুরূপ বার্তা পাঠান বলে দাবি করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, “ওরা আশপাশের জেলা থেকে লোকজন এনে টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাতে চায়। ওদের একজনকেও যেন জীবিত ফিরে যেতে না দেওয়া হয়।”
অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনের পরদিন সকালে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক মাঠে এনসিপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলাকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে পুলিশের গাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে গুলি ও বোমা হামলা চালায়। এতে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেন। তাঁদের নির্দেশ দেন যাতে এনসিপি গোপালগঞ্জে ঢুকতে না পারে। এরই ধারাবাহিকতায় একযোগে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা হামলায় অংশ নেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতায় অবস্থানরত শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লন্ডনে থাকা আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম কাজল—সবাই এ হামলায় সমন্বয় করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া, কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ফেসবুক লাইভে এসে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হামলার নির্দেশ দেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়। একইভাবে স্থানীয় নারী নেত্রী ইয়াসমিন আলম, যিনি শফিকুল আলম কাজলের স্ত্রী, নারীদের সংগঠিত করে হামলায় অংশ নিতে বলেন।
