মো. আরকান, পেকুয়া:

‘শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি’—এই তিনটি মূলনীতি ধারণ করে কক্সবাজারের পেকুয়ায় ব্যতিক্রমধর্মী এক আয়োজন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে পেকুয়া উপজেলা মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১২০ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

তবে এটি কেবল সংবর্ধনা নয়; বরং শিক্ষা ও ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা প্রকাশের এক উন্মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়।
“আগামীর ছাত্র রাজনীতি: শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা” শীর্ষক আলোচনা আয়োজনটিকে একটি বিশেষ মাত্রা দেয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)–র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

সভাপতিত্ব করেন পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য নাইমুর রহমান হৃদয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন পেকুয়া সদর পশ্চিম জোন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিরন সরওয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. বেলাল হায়দার, পেকুয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সফওয়ানুল করিম, পেকুয়া সরকারি মডেল জি.এম.সি ইনস্টিটিউশনের (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক মিসেস মারুফা দিদা এবং পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আহছান উল্লাহ, কৃষক দলের সভাপতি আবু ছিদ্দিক রনি, এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।

বক্তারা বলেন, তরুণদের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নয়, বরং গণতান্ত্রিক চর্চায় যুক্ত করাই সময়ের দাবি। তারা বলেন, রাজনীতি মানেই বিশৃঙ্খলা নয়—যদি তা আদর্শিক, শিক্ষিত ও শালীন নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, তবে এটি সমাজ গঠনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

তারা আরও বলেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশে ছাত্র রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে সেটি হতে হবে সহিষ্ণু, আদর্শভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত।

সংবর্ধিত শিক্ষার্থীদের অনেকে তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন। কেউ হতে চান চিকিৎসক, কেউ প্রকৌশলী, শিক্ষক কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মতামতও জানান অনেকে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন— “ আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, যেখানে ছাত্রদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু সহিংসতা নয়।”

অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অতিথিদের মতে, এটি কেবল একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নয়—বরং তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত করার একটি সচেতন প্রয়াস। শিক্ষার সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক সমন্বয় ঘটলে গড়ে উঠতে পারে একটি সুশিক্ষিত, সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রজন্ম—এটাই ছিল এই আয়োজনের মূল বার্তা।

পেকুয়ার মতো উপজেলা পর্যায়ে এমন সচেতন ও শিক্ষাবান্ধব ছাত্ররাজনীতির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। এটি যদি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে, তবে ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘদিনের নেতিবাচক ভাবমূর্তি ভেঙে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।