মো. আরকান, পেকুয়া :
স্মৃতি আজও দগদগে। পরিবার হারিয়েছে এক ভরসার ছায়া, সংগঠন হারিয়েছে সাহসী এক যোদ্ধা। ঠিক এক বছর আগে রাজনৈতিক সহিংসতার নির্মম বলি হন ছাত্রদলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ওয়াসিম আকরাম। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে পেকুয়ার আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল শোক, স্মৃতি আর অটুট প্রত্যয়ের আবহে।
বুধবার (১৬ জুলাই) শহীদ ওয়াসিমের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার কবর জিয়ারত করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আবছান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া।
নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, “যেই বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ওয়াসিম রাজপথে নেমেছিল, সেই সমাজ এখনও আমরা পাইনি। বরং সেই বৈষম্য আরও সুসংহত হয়েছে। তবে ওয়াসিমের আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়েছে—ন্যায়ের জন্য লড়াই কখনো থেমে থাকে না।”
ওয়াসিম আকরাম ছিলেন একজন আদর্শিক, নিষ্ঠাবান ও উদ্যমী ছাত্রনেতা। তার মৃত্যু কেবল একটি সহিংস ঘটনার পরিণতি নয়; বরং তা তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক হয়ে উঠেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, রাজনীতির পাশাপাশি ওয়াসিম পড়াশোনা ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনে ছিলেন দৃষ্টান্ত।
ওয়াসিমের পিতা বলেন, “আমার ছেলে ন্যায়বিচারের জন্য লড়েছে। কিন্তু আজও সেই ন্যায়ের দেখা পাইনি।”
স্মরণসভা ও কবর জিয়ারতে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহাদাত হোসেন রিপন, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুর রহমান নয়ন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিম রহমান, পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক এম. ফরহাদ হোছাইন এবং সাবেক সদস্য সচিব মারেফুল ইসলামসহ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।
সকলেই একবাক্যে বলেন, ওয়াসিমের মতো একজন কর্মীর শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়। তবে তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে ছাত্রদল এগিয়ে যাবে—এই প্রতিশ্রুতিই ছিল দিনের বার্তা।
ওয়াসিমের ছোট বোন জানান, “প্রতিদিন মা ভোরে উঠে ভাইয়ার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদে। আজও আমাদের বিশ্বাস হয় না, সে আর নেই।”
ওয়াসিমের পরিবার আজও বিচার ও জবাবদিহিতার অপেক্ষায়। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, তদন্তের ধীরগতি এবং বিচারহীনতার বাস্তবতা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তোলে।
ওয়াসিমের আত্মত্যাগ কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মীর গল্প নয়; এটি একটি পরিবারের বেদনা, একটি বৈষম্যমূলক সমাজের প্রতিচিত্র, এবং ন্যায়বিচারহীনতার এক নির্মম দলিল। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে উচ্চারিত হয়েছে একটাই প্রশ্ন—এইভাবে আর কত ওয়াসিমকে আমরা হারাব?
