পেকুয়া প্রতিনিধি:
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী “কমিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা”। এতে অংশ নেন উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ২৪ জন প্রতিনিধি, যারা সরাসরি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কমিটিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে আগ্রহী।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজক ছিল “ভয়েস ফর চেইঞ্জ: এমপাওয়ারিং সিটিজেনস ফর ইনক্লুসিভ গভর্নেন্স, সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড ইকুয়ালিটি” প্রকল্প, যা বাস্তবায়ন করছে খান ফাউন্ডেশন। এর মূল লক্ষ্য জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন গড়ে তোলা, যাতে সুশীল সমাজ ও স্থানীয় প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১০টায় পেকুয়া উপজেলা কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ কর্মশালার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হোসেন চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকারি-বেসরকারি কমিটিগুলো নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই প্রাণ পায়। আমাদের লক্ষ্য—নাগরিকদের এমনভাবে প্রস্তুত করা, যাতে তারা কেবল অংশ না নেয়, বরং নেতৃত্বও দিতে পারে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুর পেয়ারা বেগম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইছা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাবুল আখতার। তারা বলেন, প্রশিক্ষিত নেতৃত্বই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি।
প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেন খান ফাউন্ডেশনের জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবু ছালাম ও প্রকল্প কর্মকর্তা বেদেনা খাতুন। তারা অংশগ্রহণকারীদের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রম, গঠন ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল: ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থায়ী কমিটি, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, লিগ্যাল এইড কমিটি, সভা পরিচালনার নিয়ম, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও কমিটি গঠনের নীতিমালা।
প্রশিক্ষণে গ্রুপ ওয়ার্ক, রোল-প্লে, মুক্ত আলোচনা ও কেস স্টাডির মতো অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাহমুদুল করিম ফারুকী বলেন, “এতদিন শুধু শুনেছি বিভিন্ন কমিটির কথা। আজ বুঝলাম কীভাবে কাজ হয়, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আর একজন সাধারণ নাগরিক কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
অন্য অংশগ্রহণকারী মো. আরকান বলেন, “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার ফলে এলাকায় এই কমিটি সক্রিয় করতে আমি এখন উদ্যোগ নিতে পারব।”
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সচেতন ও কার্যকর নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
খান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচটি স্থানীয় সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় ২০২৫ সালের থেকে জুন ২০২৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের ৫টি জেলার ২০টি উপজেলার ১৭৪টি ইউনিয়নে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—জনগণকে ক্ষমতায়িত করে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করে একটি কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
