নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে আলোচনায় আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। বর্তমানে তাকে কক্সবাজারের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৩০ মে, দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং ইউনিটে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গুলশান আনোয়ার ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলার চার্জশিটও তিনিই দাখিল করেন।
তবে ২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মামলাটি বাতিল করে দেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে মামলাটি খারিজ করে।
দপ্তর সূত্রগুলো দাবি করছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন হতে গিয়েই তিনি ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার দায়ভার নেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে ‘শাস্তিমূলক’ বদলি করে কক্সবাজারে পাঠানো হয়।
জাতীয় দৈনিকসহ একাধিক মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুলশান আনোয়ার অতীতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি শুধু ড. ইউনূসই নন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধেও মামলার নেপথ্য কারিগর ছিলেন।
অন্যদিকে, আলজাজিরা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুকে দুদকের টাস্কফোর্স সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ফাঁস করেন, যেখানে গুলশান আনোয়ারকে ১১ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তার একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং পরে ২০১১ সালে দুদকে সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচার, কানাডায় বাড়ি কেনা, এমনকি অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ ভাগাভাগির অভিযোগও এসেছে।
এছাড়া, প্রতিবেদনে বলা হয়—তিনি একটি অনলাইন কোচিং একাডেমির মালিক, বিদেশ ছাড়া চিকিৎসা নেন না, এবং শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে মান্য করে পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়ও লিখেছেন।
সবশেষে প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা ছিল “ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রযোজিত এবং দুদক পরিবেশিত নাটকের অংশ”, যার পরিচালক হিসেবে গুলশান আনোয়ার প্রধানের ভূমিকা ছিল—তদন্ত, চার্জশিট, এমনকি মিডিয়া কাভারেজ নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত।
এই কর্মকর্তা সম্পর্কে উঠে আসা অভিযোগগুলো দুদকের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।