আব্দুস সালাম, টেকনাফ ;
অবশেষে দুই বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে নিখোঁজ মানসিক ভারসাম্যহীন মোহাম্মদ শরীফকে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে টেকনাফের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানসিক রোগী তহবিল’ (মারোত)।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে টেকনাফ পৌরসভাস্থ মারোতের কার্যালয়ে শরীফকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মারোতের সংশ্লিষ্টরা জানান, মানবিক দায়বোধ থেকে সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মূলত, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিখোঁজ হয়ে টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের খাবার সরবরাহ, চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করে তারা। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।
মোহাম্মদ শরীফ, যার ডাকনাম বাইল্যা, চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গুনদন্ডী শামু চৌধুরী পাড়ার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তার বয়স ৪০ বছর। শৈশবে অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবন কাটালেও ৮ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে শরীফ প্রতিদিনের মতো বাড়ির আশপাশে ঘুরছিলেন। সাধারণত সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরলেও সেদিন আর ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পাওয়ায় পরিবার হতাশ হয়ে পড়ে। পরে শরীফ নিখোঁজের দেড় বছর পর টেকনাফ পৌরসভা এলাকায় পৌঁছান এবং পুরাতন বাস টার্মিনালের রাজমহল হোটেলের নিচে আশ্রয় নেন।
শরীফকে নিয়মিত একই জায়গায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ কামাল তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। প্রথমদিকে ভাবলেশহীন শরীফ কোনো কথা না বললেও, ধীরে ধীরে কামালের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। কামালের আন্তরিকতার ফলে শরীফ তার বাড়ির ঠিকানা জানিয়ে দেন। কামাল নিজ উদ্যোগে তাকে বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপর তিনি মারোতের সহায়তায় শরীফের স্বজনদের খুঁজে বের করেন।
শরীফের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ টেকনাফে এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ দুই বছর ধরে নিখোঁজ শরীফের সন্ধান পাওয়ায় স্বজনরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং মারোতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মারোতের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে বহু মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ২০১৭ সালে স্থানীয় কিছু যুবক মিলে ‘মানসিক রোগী তহবিল’ (মারোত) নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি গড়ে তোলেন। সংগঠনটি এসব ব্যক্তিদের খাবার, চিকিৎসা এবং স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ, মঙ্গলবার বিকেলে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা নিখোঁজ শরীফকে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।
