বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় মোহাম্মদ নাঈম উদ্দীন (২৩) নামের এক যুবক পরিবার নিয়ে বিপাকে রয়েছে। প্রতিদিন সরাসরি এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারে শুনতে হচ্ছে হত্যার হুমকি। পুরো পরিবার সহ তার প্রতিবেশীরা রয়েছে আতঙ্কে। পাওনা টাকা চাওয়া এবং মাদক কারবারের বিষয় প্রকাশ করায় রোহিঙ্গা যুবক নাইফ ক্ষিপ্ত। এমনটাই জানিয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক নাইফ মোক্তারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এই স্থানীয় পরিবার।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নাঈম বাংলাবাজার স্থানীয় মৃত মো. ছালামত উল্লাহ ও মাদ্রাসা শিক্ষিকা শফিকা বেগমের দ্বিতীয় পুত্র। সে সদ্য কাতার ফেরত প্রবাসী। এব্যাপারে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নাঈম বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে মামলা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। হত্যার হুমকি ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিবেদকের হাতে বেশ কিছু অডিও ক্লিপ, ভিডিও এবং স্ক্রিনশট রয়েছে।
কক্সবাজার আদালতে দায়ের করা সিআর মামলায় মোহাম্মদ নাঈম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, নাইফ মোকতার (৩০) সত্যিকার অর্থে একজন রোহিঙ্গা। তার জন্ম সৌদি আরবে, বেড়ে উঠাও সেখানে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার পরিবার টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ঝিমংখালী গ্রামের উল্লেখ করে একটি জন্ম নিবন্ধন ইস্যু করে। সেখানে উল্লেখ আছে তার পিতার নাম মোক্তার আহাম্মদ মাতা আসমা খাতুন। যদিও এই তথ্যের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সেই জন্ম নিবন্ধনের সূত্রে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি পাসপোর্ট ইস্যু করে। ২০২১ সালের দিকে সৌদি সরকার অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মাদক সেবনের দায়ে ১বছরের সাজা পরবর্তী বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় নাইফকে।
তৎসময় বাংলাদেশি মো. নাঈম উদ্দীনের এক বন্ধুর মারফত পরিচয় হয় নাইফের সাথে। নাইফ মোকতার সেখানে বসবাসের কয়েক মাসের মাথায় এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে ক্যাম্পে থাকতো।
এদিকে তাদের দুজনের বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। এক সময় নাইফ মোকতার স্থানীয় মো. নাঈম কে কাতার যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। মো. নাঈম সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার সাথে ভিসা নিয়ে কাতার চলে যান। তখনো মো. নাঈম রোহিঙ্গা যুবকের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত ছিলনা।
কাতার যাওয়ার পর দুজনে যৌথভাবে ট্রাভেল এজেন্সির কাজ শুরু করে। সেখানে যৌথভাবে লেনদেন শুরু করে। বিদেশ যাওয়ার কয়েক মাস পর স্থানীয় মো. নাঈম দেখতে থাকে রোহিঙ্গা যুবক নাইফ এর আসল চরিত্র।
নাইফ নিয়মিত মাদক সেবন করে। সে সাথে নিয়মিত মাদক কারবারিদের সাথে তার উঠবস। সেখানেও নাইফ একটি মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের তথ্য কাতারে থাকা নাইফের এক মেয়ে বন্ধু ও পুলিশকে প্রকাশ করে দেয় মো. নাঈম। এতেই বাধে বিপত্তি। জানার পর মো. নাঈম কে রুমে আটকে নির্যাতন করে নাইফ।
পরিস্থিতি সামলে নিতে মো. নাঈম বিষয়টি পরিবারে অবগত করে। তারা একটি বিমানের টিকেট ব্যবস্থা করে দেয়। গত ২০২৩ সালের ৪ই এপ্রিল বাংলাদেশে মায়ের কাছে নিরাপদে চলে আসে নাঈম। এদিকে রোহিঙ্গা নাইফের কাছে স্থানীয় মো. নাঈম পাঁচ লক্ষ টাকার অধিক পাওনা রয়েছে। সে টাকা চাইতে গিয়েই এখন বিপাকে পুরো পরিবার।
এদিকে, তখনো কাতার অবস্থান করছিল রোহিঙ্গা নাইফ। মো. নাঈমের এভাবে চলে আসা সে মেনে নিতে পারেনি। ইতিমধ্যে খবর আসে মাদকসহ কাতার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক নাইফ। সম্প্রতি ফিরে আসে বাংলাদেশে। স্থানীয় মো. নাঈম বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করতে থাকে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য। নাইফ আজ দিবে কাল দিবে বলে ঘুরাতে থাকে। রোহিঙ্গা যুবক নাইফ টাকা তো দিবে দূর মাদকের বিষয় কেনো প্রকাশ করেছে মর্মে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
ভোক্তভোগী মো. নাঈম উদ্দীন বলেন, আমি এবং আমার পরিবার এখন আতঙ্কিত। তারা যে কোন মুহূর্তে আমাকে হামলা করতে পারে। তার কক্সবাজারে একটি মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান শক্ত। তারা যে কোন সময় আমার ও আমার পরিবারের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। আমি প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। সে সাথে তার দায়েরকৃত মামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক রোহিঙ্গা যুবকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এব্যাপারে মুঠোফোনে অভিযুক্ত নাইফ মোক্তার ঘটনার ব্যাপারে বলেন, মো. নাঈম উদ্দীনকে তিনি আপন ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করতেন। টাকা ছাড়া ফ্রিতে ভিসা দিয়ে কাতার নিয়ে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। সে বর্তমানে কাতারে মাদক মামলার সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করছেন। নাইমের কারণে তার এক সহকর্মী কাতার জেলে আটক রয়েছেন বলে স্বীকার করেন। সৌদি আরবেও কি মাদক নিয়ে আটক হয়েছিলেন কিনা এবং মো. নাঈমকে হত্যার হুমকির এমন প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তিনি উলটো মো. নাঈমের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পাওনা আছেন বলে দাবি করেন।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা দেশ ও দেশের বাহিরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গারা নামে বেনামে বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট বানিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অনতিবিলম্বে তাদের শনাক্ত করে জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করা জরুরি।
