অনলাইন ডেস্ক: কক্সবাজারের রামু চেরাংঘাটা উসাই চেং বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেয়ার ঘটনায় মো. আব্দুল ইয়াছির (২২) নামে ছাত্রদলের এক সক্রিয় কর্মীকে আটক করেছে জেলা পুলিশ।
১১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম।
কক্সবাজারের রামুর প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন কাঠের তৈরি উসাইচেন বড় ক্যাং বৌদ্ধ বিহারে গত শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে যখন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, এর মাত্র ২০ মিনিট আগে রামু ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ফোন করে জানানো হয় ঈদগড় বাজারে আগুন লেগেছে।
এমন খবরে স্টেশন কর্মকর্তা সৌমেন বড়ুয়ার নেতৃত্বে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঈদগড়ের উদ্দেশে রওনা হয়।
কিন্তু ঈদগড় বাজারে পৌঁছে তারা বুঝতে পারেন, খবরটি ছিল ভুয়া।
এরই মধ্যে রাত ২টার পর পর রামু সদরের চেরাংঘাটা এলাকায় ওই বৌদ্ধ বিহারে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
স্থানীয় লোকজন দ্রুত আগুন নেভাতে এগিয়ে আসায় এবং দমকল বাহিনীর সহায়তায় আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভব হয়। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিহারটির দোতলায় ওঠার সিঁড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
জাতীয় নির্বাচনের আগের এমন নাশকতার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি সারা দেশে আলোচিত হয়।
ঘটনার পর দিন শনিবার (৬ জানুয়ারি) বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংকিউ রাখাইন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে রামু থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুনয়ন বড়ুয়া।
সেই বহুল আলোচিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান (২৩) নামে এক যুবককে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থেকে তাকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে, বুধবার সন্ধ্যায় রামুর ফতেখাঁরকুলের হাইটুপি ভূতপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার দিন রাতে ব্যবহৃত সেই সিমটি উদ্ধার করা হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতার হওয়া যুবক ইয়াছির রামু উপজেলা ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের পূর্ব মেরলোয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিমের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযানে থাকা ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো বলেন, যে মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করে ভুয়া আগুন লাগার খবর দেয়া হয়েছিল, ইয়াছিরের দেখিয়ে দেয়া স্থান থেকে সেই সিম কার্ডটি উদ্ধার করে পুলিশ। তবে অনেক খোঁজাখুজির পরেও ব্যবহৃত ফোন সেটটি পাওয়া যায়নি।
চেয়ারম্যান ভুট্টো আরও জানান, আভিযানের সময় ইয়াছিরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলার পরই ফোন এবং সিম আলাদা আলাদা করে ফেলে দেন তিনি। সিমটি যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার উল্টো দিকে কচু ক্ষেতে সেটটি ছুঁড়ে ফেলা হয় বলে সে জানিয়েছে। কাল দিনের আলোতে সেটটি খোঁজার জন্য লোক পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, আগুনের ঘটনার পরপর সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগকারী ব্যাক্তিকে শনাক্ত করে। পরে তাকে গ্রেফতার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে গত পরশু রাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় আটক ব্যাক্তির মোবাইল চেক করে ও প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে স্বীকার করে সে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় একজন কর্মী।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকা বিএনপি নাশকতা চালিয়েছিলো সেখানে তার উপস্থিতি সরব ছিল। এছাড়া কক্সবাজারে যে সমস্ত ঝটিকা মিছিল, আক্রমণ বিএনপি করেছিল সেখানেও তার উপস্থিতি পায়। এছাড়া নির্বাচন পূর্ববর্তী সরকারকে বিব্রত করা, দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে জানান।
পুলিশ সুপার আরও জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চেয়েছিল গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তি। এছাড়া আজকে তাকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন এবং রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। যদি রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় তাহলে নিবিড় জিজ্ঞেসাবাদ করে এই ঘটনার পেছনে কার বা কাদের ইন্ধন রয়েছে সেটি বের করার চেষ্টা করবে। এছাড়া গ্রেফতার হওয়া নাশকতাকারীর পূর্বে মামলা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।