মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

মামলার চার্জ গঠনের দিন সহ মাত্র ৪ কার্য দিবসের মধ্যে সম্পূর্ণ বিচারকাজ সম্পন্ন করে মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) অতি দ্রুততম সময়ে একটি মামলার রায় ঘোষণা করে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ আমির হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, ২০২২ সালের ১১ জুলাই দুপুর ২ টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবনগর পাড়ার মৃত আবদুল হাকিমের পুত্র নুরুল হুদা সওদাগর (৬৩) এর উপর বসতবাড়ির সীমানা বিরোধ নিয়ে একই এলাকার আবদুর রহমান এর পুত্র দোস মোহাম্মদ প্রকাশ দোস্ত মোহাম্মদ সহ আর ২/৩ জন হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। হামলায় বয়োবৃদ্ধ নুরুল হুদা সওদাগর গুরুতর আহত হন। আহত নুরুল হুদা সওদাগরকে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় আহত নুরুল হুদা সওদাগরের পুত্র মোঃ জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে দোস মোহাম্মদ প্রকাশ দোস্ত মোহাম্মদ সহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার চকরিয়া থানা মামলা নম্বর : ১৯, তারিখ : ১১/০৭/২০২২ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর : ৩৪০/২০২২ (চকরিয়া) ইংরেজি।

চকরিয়া থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগ পত্র) দাখিল করলে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদ হোসাইন ২০২৩ সালের ২৬ জুন চার্জশীটটি গ্রহণ করেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার এর আদালতে প্রেরণ করা হয়। একই আদালতে গত ২১ ডিসেম্বর মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। চার্জ গঠনের পর মাত্র ৩ কার্যদিবসে অর্থাৎ ২৬, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটির ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, জখমীর মেডিকেল সার্টিফিকেট পর্যালোচনা, আলামত প্রদর্শন, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বিজ্ঞ বিচারক কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার আসামী দোস মোহাম্মদ প্রকাশ দোস্ত মোহাম্মদকে ফৌজদারী দন্ড বিধির পৃথক ৩টি ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে মোট ১২ বছর সশ্রম কারাদন্ড, ৩ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন।

তারমধ্যে, আসামীকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩২৬ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড, এক হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো একমাস বিনাশ্রম কারাদন্ড, ৩২৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড, এক হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো একমাস বিনাশ্রম কারাদন্ড, ৩০৭ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড, এক হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো একমাস বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। আসামীকে দেওয়া সকল শাস্তি একইসাথে চলবে বলে বিজ্ঞ বিচারক কৌশিক আহম্মদ খোন্দকার রায়ে উল্লেখ করেন।

বেঞ্চ সহকারী মো: আমির হোসাইন আরো জানান, রায় ঘোষণার সময় আসামী দোস মোহাম্মদ প্রকাশ দোস্ত মোহাম্মদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমদ মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার চার্জ গঠনের দিন থেকে থেকে শুরু করে রায় ঘোষণা পর্যন্ত শুধুমাত্র ৪ কার্যদিবসে সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম-৪ বলেন, খুব দ্রুততম সময়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে আদালত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা বিচারপ্রার্থীদের মনে আশার সঞ্চার করবে। এভাবে সল্প সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে বিলম্বিত বিচারের অযথা বিড়ম্বনা থেকে বিচারপ্রার্থীরা রেহায় পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল বলেন, আদালতে অবকাঠামোগত ও জনবল সমস্যা, লজিস্টিক সংকট সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্বেও মাত্র ৪ কার্যদিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি করে আদালত নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এতে বিজ্ঞ বিচারক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিঃসন্দেহে আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, বিলম্বিত বিচার, ন্যায় বিচারকে ব্যাহত করে। স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের অনিহা বোধ আসে। যা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তরায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংকট ও সমস্যা উপেক্ষা করে পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়, তা কক্সবাজার এসিজেএম আদালতে মাত্র চার কার্যদিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, এরকম স্বল্প সময়ে মামলা নিষ্পত্তি হলে মামলার জট কিছুটা হলেও কমবে এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে।