অনলাইন ডেস্ক: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নবনিনির্মত রেললাইনের উদ্বোধন পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। রবিবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর রেল ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

রেলমন্ত্রী জানান, নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ আগামী ১২ নভেম্বর আর খুলনা-মোংলা রেলপথ ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১২ নভেম্বর সময় দিয়েছেন। কক্সবাজারের রেললাইন খুলে দেওয়া হলে কক্সবাজার সারাদেশের সঙ্গেই যুক্ত হবে। আর আগামী ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী খুলনা-মোংলা রেললাইনের উদ্বোধন করবেন।’

তিনি জানান, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পথের চলাচল সহজ করতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ চলছে যা উদ্বোধনের আগেই সংস্কার কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন এই পথে ট্রনের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার এ রেললাইনে সাতকানিয়া অংশে মাত্র ১০০ মিটার রেললাইন বসানোর কাজ বাকি ছিল যা সোমবারের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

তিনি আরও জানান, সোমবার থেকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পুরো ১০০ কিলোমিটার রেললাইন দৃশ্যমান হবে। এরপর আগামী কয়েকদিন কোথাও কোনও ত্রুটি বা সমস্যা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহে এ রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৯০ শতাংশ। চলতি মাসেই কক্সবাজারে নির্মাণাধীন রেলওয়ে স্টেশনের পুরো কাজ শেষ হবে। বাকি স্টেশন ও সড়কের কাজ কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের অদূরে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে হাতে নেয় সরকার। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়ালগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি রেলওয়ে স্টেশন, চারটি বড় ও ৪৭টি ছোট সেতু। ১৪৯টি বক্স কালভার্ট ও ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লেভেল ক্রসিং রয়েছে ৯৬টি।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।

এছাড়া, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর পাঁচবার সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির করা হয় এবং ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়।

প্রকল্প দুটি এ মাসে উদ্বোধন করার কথা জানিয়ে ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
-প্রতিদিনের বাংলাদেশ