সিবিএন ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ আরও দুই বছরের বেশি থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম- কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্বাচন নয়, প্রতিপক্ষ বিএনপির চোখ এখন আন্দোলনে। নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে ‘দাবি আদায়ের’ দিকেই মনোযোগ দলটির। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়েও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা দাবি করেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আড়াই বছর খুব একটা বেশি সময় নয়। যদিও একটির পর আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি দলের সব সময়ই থাকে।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের ভেতর ঝগড়া-বিবাদ, কলহ তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও নেতাকর্মীদের মধ্যে আলস্য এসেছে। এগুলো দূর করে চাঙাভাব ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এমন ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচনি আমেজ তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।

যদিও বিএনপি এখনই প্রস্তুতিতে মনোযোগ না দিয়ে নির্বাচনের কাঠামো ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে জোর দিচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির একক কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনাও প্রায় চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে চলতি মাস বা অক্টোবরে নতুন দাবি তুলে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করবে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাশেষে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “সভায় সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দলের বিভিন্ন উপ-কমিটির সেমিনার করে দ্বাদশ সংসদের নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়ন করতে হবে। ইশতেহারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনি ‘লাইনে’ যাত্রা শুরু করলো আওয়ামী লীগ।”

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করা, দলের মধ্যে ছোট-বড় বিবাদ মিটমাট এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্যম সৃষ্টি করা দলীয় সভাপতির লক্ষ্য।’

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আড়াই বছর খুব বেশি নয়। এরমধ্যে অনেক কার্যক্রম রয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি অপপ্রচার মোকাবিলা করা, গণমুখী ইশতেহার প্রণয়ন, জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরা- এসবের জন্য এখনই সক্রিয় হতে হবে।’

জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। আমাদের হাতে দুই বছরের মতো সময় আছে। এরমধ্যে দলকে সংগঠিত করতে হবে। সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে হবে।’

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘দলে কিছু বর্ণচোরা ঢুকেছিল। তাদের চিহ্নিত করা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও দল থেকে বের করে দেওয়া, এসব কাজ বাকি। নির্বাচনের আগে মূলত এগুলোই শেষ করার দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভাপতি।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। রাজনৈতিক চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে জনমত তৈরিই এখন দলটির লক্ষ্য।

তবে বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রধান নেতা সংশয় প্রকাশ করেন, বিএনপি এর আগেও দফায় দফায় আন্দোলনের কথা বলেছে। কোনও নেতা এও জানান, বিএনপির মধ্যে আন্দোলন করা নিয়ে দলীয় ঐকমত্য নেই।

জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কী পদ্ধতিতে করবেন, সেটা ঠিক করতে সব দল, সংগঠন ও সমাজের নানা পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ -বাংলা ট্রিবিউন