সাজন বড়ুয়া সাজু ,উখিয়া:

মায়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতন থেকে প্রাণে বেঁচে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিনের পর দিন কয়েকগুণ হারে বেড়েই চলেছে।
গত ২০১৭ সালে আগস্ট মাসের শেষের দিকে মায়ানমার থেকে প্রাণে বাচঁতে পালিয়ে আসলে বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে এই দেশে অস্থায়ীভাবে স্থান দেয়। যার ফলে বর্তমানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন এনজিও এর সহায়তায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরী হয়।

উখিয়া-টেকনাফ এই দুই উপজেলায় গোটা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছেয়ে যাই। উক্ত দুই উপজেলায় প্রায় ছয় লাখের বাংলাদেশী জনগণের বিপরীতে দ্বিগুণ হারে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গার স্থান হওয়া ঘাড়ের উপর যেন চেপে বসা। যার ফলে পরিবেশের যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিন দিন তেমনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বসবাসও কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে রোহিঙ্গারা যেন বেপরোয়া। ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরী করে চলছে চাঁদাবাজি,ঘুম,খুন। যেন নিত্য এক কর্মকান্ড।এছাড়া রোহিঙ্গাদের অনিয়ন্ত্রিত বাচ্চা জন্ম নেয়ার বিষয়টাও যেন তাদের কাজে একদম সহজ ব্যাপার। দেশীয় এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এর HCMP প্রজেক্টের একটি তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের শুধু এক পরিবারে ১৪-১৬ জন সদস্য আছে।

তবে দেশে এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা কত তা নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বিস্তর ফারাক রয়েছে জাতিসংঘের।কেননা ইউএনএইচসিআরের সর্বশেষ জরিপের মতে ২৫ শে আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৩ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা বলছেন, নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা গত সপ্তাহেই ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের যুক্তি হলো, ইউএনএইচসিআর তাঁবু ধরে যে প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গার সংখ্যা নির্ধারণ করছে, বাস্তবতা তার ভিন্ন। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ তাঁবুর বাইরে অবস্থান করছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন স্থানে গভীর অরণ্যেও নিজেদের মতো করে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। সেখানে কোনো জরিপ চালানো হয়নি। এ ছাড়া একটি অংশ কক্সবাজারে আত্মীয়স্বজনদের বাসায়ও উঠেছে। এগুলোও গণনার বাইরে। তাই স্থানীয়রা মনে করছে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্য ১৬ লাখেরও বেশি ছাড়িয়েছে। যাগত চার বছরের চার গুণ রোহিঙ্গাদের সংখ্য বেড়েছে বলে অনুৃমান করা হচ্ছে।

বালুখালী 8W ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নাগরিক ইসমাইল মিয়া বলেন আমরা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের আসার সময় পরিবারের সংখ্যা ছিল ৬ জন আর বর্তমানে পরিবারে সদস্য সংখ্যম ১১ জন। এনজিও থেকে যা ঘর দিয়েছে তা দিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করতেছি এবং খাবারও খুব সংকট।

কুতুপালং রেজিঃস্টার ক্যাম্পের মোঃ কালাম বলে আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সংখ্যা বর্তমানে ১৩ জন এবং বার্মা থেকে আসার আগে ছিল ৫ জনে। তাই তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে আরও খাদ্য ও বাসস্থান কামনা করে অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থানকাল প্রায় ৪ বছর হয়ে গেল। একে তো সম্পদ সীমিত, তার ওপর জনবহুল দেশ, এ কারণে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বহুল এই বসবাসে মানুষের অবস্থান বাড়তি একটি চাপ মনে করছেন স্থানীয়রা। তাই উখিয়া-টেকনাফের বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীরা সরকারের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত জন্মহার নিয়ন্ত্রণে আনার অনুরোধ করে।