অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন:
বর্তমানে সামাজিক দুরত্ব বা সোসিয়াল ডিস্টেন্স (social distance) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া হয। করোনা ভাইরাসের সময় এই মৃত্যুর মিছিলে সাধারন মানুষকে বোঝাতে চেস্টা করা হচ্ছে সোসিয়াল ডিস্টেন্স বা সামাজিক দুরত্ব কি?সত্যি বলতে কি আমাদের চারিপাশের মানুষ এই সামাজিক দুরত্বটাকে কতটুকু গ্রহন করতে পেরেছেন।যখন লক ডাউন ছিল তখন সরকার জোর করে হোক বা ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝাতে প্রান পন চেস্টা করেছেন এই সামাজিক দুরত্ব বজার রাখার ব্যাপারটি কত গুরুত্বপুর্ণ। মৃত্যুর মিছিল কিন্তু একটুও কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে সরকার জীবন ও জীবিকার প্রযোজনে লক ডাউন উঠিয়ে নিয়েছেন।আমরা জানি জীবন জীবিকা নিয়ে অনেকে অনেক প্রশ্ন তোলেছেন। সাথে সাথে মানুষকে বোঝাতে চেস্টা করা হয়েছে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে যা যা করনীয় তা কঠিন ভবে মেনে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমি ভেবে কুল পাইনা এই বাংলাদেশের মানুষ কি আফ্রিকার কোন দেশ থেকে খারাপ? দেশের এই দুর্দিনে সচেতনতা তাদের মধ্যে কতটুকু কাজ করে?আমি নিজেই ভেবেছিলাম এই নিয়ে এখানে না লিখে মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবরে তাঁর ফেইস বুকে লিখবো। তিনি আমার মতে“ মিরর অব দি সিটি” (Mirror of the The City)। অর্থাৎ শহরের আয়না। এমনিতে আমি যতটুকু জানি তিনি সবার পোস্ট পড়েন যথাযত ব্যবস্থাও নেন। আবার ভাবলাম অন্তত কাগজে কিছু লিখলে অনেকে পড়বে।

আমি জানি মানুষ হলো সৃস্টির সেরা জীব। কিন্তু তা মানুষ এই করোনার দিনে তার প্রমান কতটুকু দিকে পেরেছে? লকডাউন করলে পাড়ার মানুষের জরুরী কাজ বেড়ে যায়। প্রয়োজনে আইন শৃংখলা বাহিনীকে ও মিথ্যা বলতে কুন্ঠাবোধ করেনা। কিনুতু যখন লাঠি দেখে তখন একেবারে নিশ্চুপ থাকে। এখন রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে মাস্ক পরায় ( “হওর যা আমাদের দেশীয় ভায়ায় বলে)।রাখালের বেতের আস্ফালনের ভয়ে গরু একটুও এদিক সেদিক করেনা। সুশৃঙ্খল ভাবে আল বেয়ে হেঁটে চলে যায়। কারো ধান নস্ট করে না। তাহলে বলতে পারি বর্তমানে কি আমাদের মানুষ ঐ গরুর চেয়ে খারাপ। তা না হলে সরকারের এত আর্তচিৎকার মানুষ শোনছেননা কেন? মসজিদে গেলে সামাজিক দুরত্বের ছিটেফোটা নিয়ম গুলোও কেউ মানেনা কেন? তারা কি এমন মুর্খ যে করোনা কি জিনিষ জানেনা? এখানে কোন রাজনীতি নেই । ধর্মীয় দৃস্টিকোন থেকে বলতে গেলে রাসুল (সা:) বলেছেন,“যদি কোন অঞ্চলে মহামারির সংবাদ পাও,তাহলে তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে না,আর আক্রান্ত অঞ্চলে তোমরা অবস্থান করলে সেখান থেকে বের হবেনা(বুখারী হাদীস নং ৫৭২৭)।চিকিৎসা গ্রহন করা সুন্নত । আপদকালীন সময়ে কোলাকুলি না করার বিষয়ে রাসুল (সা:) থেকে বর্নিত আছে,একদা রাসুল সা: নিকট আগত সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের একজন কুষ্ঠরোগী থাকায় রাসুল সা: তাঁকে বললেন,“তুমি চলে যাও আমি তোমার বাইয়াত গ্রহন করেছি”(মুসলিম ৫৭১৭)।বিদেশ ফেরত করুনার লক্ষনযুক্ত এবং জ্বর হাচি কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের সদস্যরা অথবা তাদের সংস্পর্সে এসেছেন এমন সকলের ১৪ দিন স্বেচ্চা কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করুন।ূপ্রত্যেক নামাজের জন্য নতুন করে ওযু করুন।ওযুর সময় হাত ধোয়ার ২০ সেকেন্ড সাবান ব্যবহার করুন।মহামারি সম্পর্কে রাসুল সা: বলেন ,“এটি অল্লাহর গজব বা শাস্তি, বনি ইসরাইলের উপর এসেছিল তার বাকি অংশই হচ্ছেমহামারি।অতএব কোথাও মহামারি দেখাদিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসোনা। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে অবস্থান না করলে সে জায়গায় তোমরা যেওনা।(তিরমিজিশরিফ হাদিস ১০৬৫) তাহলে মসজিদ কর্তৃপক্ষ কেন এব্যাপারে কোন নিয়ম মানছেন না। একজন করোনা সচেতন নামাজি দুরত্ব বজায় রাখতে চেস্টা করলেও পাশে অসচেতন একজন নামাজি নিয়ম ভঙ্গ করে নির্দ্দিধায় নামাজে দাড়াচ্ছেন।এখানে তো ইমাম সহ দু চার পাঁচজন লোক থাকেন। এখানেও কি পুলিশ এসে মুসল্লিদের পেঠাতে হবে? সামাজিক দুরত্ব শেখাতে হবে? তিন চার তলা মসজিদ , সামাজিক দুরত্বমেনে যে তলায় যতটুকু লোক ধরে তার বেশী মসজিদ কর্তৃপক্ষ ঢুকতে দেবেন না।জায়গা না কুলালে অন্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে। এই যা। কেন তা হয় না। ইমাম সাহেব তো দেখতেই পাচ্ছেন মানুষ সামাজিক দুরত্ব মানছেননা। তার উপর তিনি দীর্ঘক্ষন ওয়াজ করছেন। কথাবার্তা বলছেন। নামাজ ধর্মীয় নিয়ম মেনে খুতবা পাঠসহ নামাজ সহসা শেষ করলে ভালো হয়।এখন দীর্ঘক্ষন ওয়াজএর কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। কারন আমরা একেবারে মসজিদ বন্ধ করেছিলাম করোনা দুর্যোগের জন্য।শুধু এখানে কেন ইসলামের কেন্দ্রস্থল মক্কা মদীনা শরীফেও বন্ধ। এখন এমন কোন অবস্থার সৃস্টি হয়নি যে একেবারে সবকিছু নরমাল অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে।আমার মনে হয় মসজিদ কমিটির কড়া নজরদারীর প্রয়োজন আছে এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার। কারন করোনা কিভাবে সংক্রমন হয় তা চোখে দেখা যায়না। এটি নীরব , নিশ্ব:দ্ব আততায়ী।

আমি অনেকটা আশাবাদী হয়েছি বিভিন্ন শপিংমলের দোয়ারে “ মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ” এই কথাটি দেখে। ব্যংকেও একি অবস্থা গাদাগাদি করে মানুষ লাইনে দাড়াচ্ছে। কোন সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছেনা।এটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সহজেই সামলাতে পারেন। কিন্তু তারা তা করছেন না। ব্যাংকে বিদ্যুত বিল দিতে গিয়ে গাদাগাদি করে দাড়ানো মানুষের মধ্যে হাতাহাতি মারামারিও হচ্ছে। সেদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই।ব্যাংকের নিরাপত্তা , শৃংখলা ব্যাংককেই করতে হবে। এখানে পুলিশ এসে তাদের এটি শিখাবেন না।

শহরে পাবলিক যানবাহন অনেক বোধহয় হাজার দশেক। অনেক যানবাহনে দেখতে পাবেন ড্রাইবার , যাত্রীর মাস্ক নেই। যদিও কারো কারো থাকে নাকে মুখে মাস্ক না পড়ে মুখের গ্রীবায় মাস্ক শোভাপাচ্ছে। যতটুকু জানি মাস্ক না পরলে সউদি আরবে দশহাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়।আমাদের সদাশয় সরকার মানুষকে ভালবেসে তা করছেননা বলে আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারিনা। এমনও দেখা যায় কোন সচেতন যাত্রী নিয়ম মেনে গাড়ীতে উঠলেও অন্য যাত্রী মাস্ক ছাড়া গাড়ীতে আরোহন করছেন। এখানে ড্রাইবার তো বলতে পারতেন ,ভাই আপনার মাস্ক নাই গাড়ীতে উঠবেন না। এখানে তো কোন রাজনীতি নেই। ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগ বি এনপি নেই। মানতে অসুবিধা কোথায়? যতই সুসাস্থ্যবান ছেলে হোক না, করোনার কাছে দু মিনিট , সব শেষ। আমরা দেখেছি হাসপাতালে অমুক নেতা আইসিউতে ভর্তি দুমিনিটে শেষ । বাঁচানো গেল না।

গ্রাম কিংবা অজ পাড়া গাঁয়ের লোকেরা এখনো সামাজিক দুরত্ব নিয়ে অজ্ঞ । তাদের সচেতন করতে হবে । মসজিদের ইমামদের বোঝাতে হবে। এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ প্রতিনিয়ত করতে হবে।’ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ’ এ সময় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকার বিকল্প নাই। এক্ষেত্রে সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে হবে । অপরিস্কার হাত দ্বারা নাক , মুখ চোখ বা মুখমন্ডল স্পর্স্শ করা যাবেনা। পাবলিক প্লেসে পুলিশি নজরদারী বাড়াতে হবে ।জরিমান্ াকরতে হবে। ধুমপানের জন্য জরিমানা করতে পারলে করোনার জন্য জরিমানা করতে পারবেন না কেন?

লক ডাউনের সময় পাড়ার ছেলেনা রাস্তায় নেমে অনেক ভালো কাজ করেছে।মানুষকে সামাজিক দুরত্ব, অনিয়মিত চলাচল, ইত্যাদীর জন্য তাঁরা গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। এখনও সরকার চাইলে সমাজে এধরনের কিছু উদ্যোগী লোকবল নীয়োগ করতে পারেন।তারা রাস্তায় যানবাহন চলাচলে, পাবলিক প্লেসে অনিয়ম, মসজিদে সামাজিক দুরত্ব মানার ব্যাপারে ভুমিকা রাখতে পারেন।