–  এহ্সান উদ্দিন

সূর্য উদিত হয় চারপাশ আলোকিত করবার জন্য। তার মধ্যে উচ্চ অন্ত্যজ শ্রেণির কোনো তফাৎ নেই। অমোঘ নিয়মে সে পৃথিবীর সর্বত্র ঝলমলে রাখে। এই ধরাধামে সূর্য সমতুল্য কিছু মানুষের আবির্ভাব ঘটে। তাঁরা প্রত্যেকে নিঃস্বার্থ ব্রতচারী, জ্ঞান গরিমায় বলীয়ান হয়ে তাঁরা নিজেকে বিলিয়ে দেন সমাজ ও মানবতার তরে। আমি এমনতরো একজন ব্যাক্তিত্বের গুণকীর্তন করবো বলে শিরোনাম ঠিক করেছি ‘বিএ কামাল এক দ্বীপান্বিত অধ্যায় ‘। টেকনাফ উখিয়া তথা কক্সবাজারে মধ্যবয়স্ক বা বয়োজ্যেষ্ঠ কিছু ইতিহাস সচেতন মানুষের কাছে বিএ কামাল পরাভূত সমাজ সংস্কারক বা ভূয়োদর্শী শিক্ষাবীর হিসেবে সমধিক পরিচিত। আমাদের মতন তাগড়া যুবক বা আরো কমবয়সী ছেলেপুলের কাছে তিনি অনেকটা অপাঙক্তেয় কিংবা নামসর্বস্ব একজন ব্যাক্তি। বিদগ্ধজনরা প্রায়শ বলে থাকেন বাঙালি বিস্মৃতমনা জাতি। তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের অগ্রনায়কদের ভুলতে পছন্দ করেন এবং সেটা দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেই করেন। একজন বিএ কামালের জীবনপঞ্জিকা বা তাঁর মরণোত্তর প্রাপ্তির খাতা মেললে এর পুরোদস্তুর প্রমাণ মেলে। বিএ কামালের জীবনদর্শন তাঁর রেখে যাওয়া সমাজব্যবস্থা কতটুকু পরিমাপ করতে পেরেছে সেটার বিচার বিশ্লেষণ আজকে নাই বা করলাম, আমি কেবল এ মহৎ ব্যাক্তির কিঞ্চিৎ কর্মপরিধি ঘাটাঘাটি করবার চেষ্টা করবো। ১৯৯৮ সনের ১৭ ডিসেম্বর, তখন হ্নীলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি, মাইকিং-এ শুনলাম আলফালাহ একাডেমির কামাল স্যার আর নেই এবং পরেরদিন সকালে আলফালাহ’র মাঠে স্যারের নামাযে জানাজা হবে। স্মৃতির মানসপটে এখনও জাজ্বল্যমান, সেদিন মাঠের এককোণায় ড্যাবড্যাব চোখে দাঁড়িয়ে স্যারের পুরো জানাজার নামায প্রত্যক্ষ করেছি। সেদিন আমার মতন ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া একজন ছেলের কিছুতেই বুঝার উপায় ছিলো না একজন কত বড় মাপের বাতিঘর আমার চোখের সামনে দিয়ে লোকান্তরিত হচ্ছেন। স্রেফ এটুকুই জানতাম ইনি টেকনাফের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। সেসময় কিংবা এইসময়েও ওনাকে পরিচয় করিয়ে দেবার মোক্ষম হাতিয়ার এটিই। মোটাদাগে ঘটা করে বিএ কামাল আলোচনা কোনসময়ে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। শিক্ষিত সমাজ বলুন বা অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত প্রত্যেকের কাছে তিনি দুএক বাক্যের মুখরোচক আলাপচারিতা ব্যতিরেকে সর্বাংশে বিস্মৃত। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ছাত্রের সাথে ভাব বিনিময় বা মেলামেশার সুবাদে বুঝতে পেরেছি তারা তাঁদের অগ্রজ আলোকবর্তী ব্যাক্তিত্বের নিকট চরমভাবে কৃতজ্ঞ। এবং ভীষণভাবে লক্ষ্য করেছি তাদের কথায় কথায় ইনাদের প্রতি শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতার ফুলঝুরি। সেদিক থেকে আমরা কক্সবাজারবাসী যোজন যোজন দূরত্বে পিছিয়ে। আক্ষরিক অর্থে বিএ কামালের প্রচেষ্টার ফসল শ-য়ে-শ, কিন্তু প্রাপ্তির খতিয়ান নিরেট শূন্য।
কালজয়ী এ মহাপুরুষ বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা টেকনাফ থানার বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী গ্রামে আনুমানিক ১৯১৬ সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং দাদা তৎকালীন সময়ের নামকরা ভূস্বামী আবদুন্নবী সিকদার। মহীয়সী মায়ের নাম আমিনা খাতুন। দুভাই দুবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় সন্তান। তাঁর গোটা পারিবারিক আবহ শিক্ষাবান্ধব হওয়ায় শিক্ষাদীক্ষায় তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। তিনি কক্সবাজার সদর স্কুল থেকে প্রাইমারি শিক্ষা সম্পন্ন করে গভর্নমেন্ট হাই -এ ভর্তি হন। সেখান থে‌কে ১৯৩৭ সনে সেকেন্ড ডিভিশনে(মানবিক বিভাগ) মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। মেট্রিক পাশ করার পর তদানীন্তন উখিয়া থানার সমাজচিন্তক ব্যাক্তিবর্গ মকবুল আহমদ সিকদার, আলিমুদ্দিন বলি, সৈয়দ আহমদ সিকদার, অজিউল্লাহ মুন্সি ও হাছানুজ্জামানের অনুরোধে উখিয়া হাই স্কুল প্রতিষ্ঠায় নিজেকে সঁপে দেন। বছরব্যাপী তিনি অত্যন্ত কাটখড় পুড়িয়ে গড়ে তুলেন আজকের দিগ্বিজয়ী উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। তাঁর অমোঘ বিদ্যোৎসাহ ও মেধার ঝনঝনানি দেখে সকল সমাজ হৈতষী মানুষ উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য তাঁকে চট্টগ্রামে পাড়ি দেবার পরামর্শ দেন। তাঁদের কথামত তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে প্রাদেশিক পরিষদের তৎকালীন সদস্য খান মুহাম্মদ জালালুদ্দীন ও খান বাহাদুর ছিদ্দিকুর রহমানের সহায়তায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পান। সেখান থেকে ১৯৪২ সনে ব্যবসা ও রাজনীতি বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে তিনি বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। উল্লেখ্য সেসময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। সনদ গ্রহণের জন্য সমাবর্তন অনু্ষ্ঠানে কলকাতা গেলে সেখানে তিনি যথেষ্ট মেধার স্বাক্ষর রেখে কলকাতা মিলিটারি পুলিশে যোগদানের সুপারিশ পান এবং যোগদান করে বছরদেড়েক পুলিশে চাকুরিও করেন। কথিত আছে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো প্রভাবশালী পক্ষের লোক উনাকে মোটা অংকের উৎকোচ দিতে গেলে তিনি সাফ অপারগতা প্রকাশ করেন। যার দরুন, তিনি উভয়ের রোষানলে পড়ে চাকুরিতে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য হন এবং সেটিই হয় তাঁর জন্য শাপে বর। আর আগপিছ না ভেবে শিক্ষার ঝাণ্ডা হাতে পাড়ি জমান নিজ বাসভূমে। এমনিতে তাঁর রক্তে শিক্ষা বিস্তারের নেশা অতুলনীয়ভাবে প্রবাহমান ছিলো। এরিমধ্যে তাঁর পরিবার পরিজন নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে হ্নীলা পূর্ব পানখালী এলাকায় জায়গাজমি কিনে থিতু হয়ে যান। নিভৃতচারী মানুষটি পুলিশি চাকুরি ছেড়ে নাড়ির দেশে ফিরে আর বসে থাকেন নি। স্থানীয় মগ জমিদার ক্যামারাড চৌধুরী, চাং থান চৌধুরীসহ এলাকার গন্যমান্য সুধীজনের সহযোগিতায় নেমে পড়েন হ্নীলা হাই স্কুল গড়ার কাজে। ১৯৪৬ সনে স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর তিনি বেশিদিন আর হ্নীলায় থাকেন নি। এরপর যখন শুনলেন টেকনাফ পাইলট স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা। সেখানেও টেকনাফের কিছু মানুষের অনুরোধে রাখলেন অগ্রগণ্য ভূমিকা। এবং সেখানে তিনি বছরতিনেক শিক্ষকতা করে ১৯৪৮ সনে পুনরায় হ্নীলা হাই স্কুলে এসে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩০ বছর অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে জরাজীর্ণ হ্নীলা হাই স্কুলকে বুকে আগলে রেখে একটি শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে রুপান্তর করে। এরপর রঙ্গিখালী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কামরুল ইসলাম প্রকাশ জংলি ফকিরের অনুরোধ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৮ সন পর্যন্ত স্বল্পভাষী বিএ কামাল স্যার প্রাণপণ চেষ্টায় ঘোর জঙ্গলে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে দেন। ১৯৮৮ সনে ফকির হুজুর চলে যাবার পর তিনি মাদ্রাসায় ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন এবং এসে যোগ দেন হ্নীলা শাহ মজিদিয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায়। ১৯৯৩ সন পর্যন্ত এ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। এরই ফাঁকে ১৯৯৪ সনে হ্নীলা স্টেশন সংলগ্ন আলফালাহ একাডেমি নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা হলে সর্বমহলের জোরাজুরিতে তিনি সেখানে যোগদান করে আমৃত্যু শিক্ষা দিয়ে যান। তিনি একজন জাত শিক্ষক, তাঁর শিরা ধমনী মজ্জায় মননে শিক্ষার স্রোতধারা আজন্ম বহমান। মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত তিনি মলাটবদ্ধ বইয়ের পাতায় চক্ষু বুলিয়েছেন স্বমহিমায়। চেরাগ জ্বালিয়ে নিশিরাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বই পড়তেন আপনমনে। শ্রেণিকক্ষে, ঘরে, বাইরে সবখানে সবসময় সবাইকে সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দিতেন। ব্যাক্তিজীবনেও তিনি প্রতিটি খারাপ সময়ে অত্যন্ত দৈর্যসহকারে মোকাবেলা করেছেন। এছাড়া খাওয়া দাওয়ার প্রতিও তিনি তেমন একটা সিরিয়াস ছিলেন না, শাকসবজি খেতে বেশি পছন্দ করতেন। বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ঘরের প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিজে করতে। ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের সাথে খুব একটা মিশতেনও না। নিজেকে অনেকটা আড়াল করে রাখতে পছন্দ করতেন। তাঁর সংসার জীবনও তেমন একটা সুখকর ছিলো না। বিএ পাশ করার পর ১৯৪৩ সনের শেষদিকে আরকানের উচ্চ বংশীয় মুসলিম জমিদারের বিদূষী কন্যা রকিমা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন মেয়ে, তিন ছেলে। সুখে সৌন্দর্যে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভালভাবে কাটছিল দিন। বিধিবাম হঠাৎ করে ১৯৫০ সনের দিকে তাঁর স্ত্রীর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বহু ডাক্তার কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েও তাঁকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি। দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর রকিমা খাতুন(এলাকায় বুলবুলির মা নামে অত্যধিক পরিচিত) পাগল বেশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। অবশ্য বছরদশেক আগে তিনিও মারা গিয়েছেন। প্রথম স্ত্রীর মস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটলে তাঁর পরিবারে বিশাল ছন্দপতন ঘটে। ছোটছোট বাচ্চাকাচ্চাগুলো দেখভাল করতে তাঁর যাচ্ছেতাই হিমশিম খেতে হয়। ফলশ্রুতিতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে মনস্থির করেন এবং স্থানীয় মুস্তফা খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এঘরেও তাঁর তিন ছেলে, দুই মেয়ে রয়েছে। সসবথেকে বিস্ময়কর বিষয় হলো, ওনার ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে চেয়ে তাঁর দুএকজন ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের বাবার জ্ঞানের শান শওকত সম্পর্কে ততোটা ওয়াকিবহাল নন। এটি আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে। অপ্রিয় সত্য হলো বিএ কামাল স্যার তাঁর মাজেজা জৌলুশ বুঝার মতন আপাতদৃষ্টিতে কোন উত্তরপুরুষ রেখে যেতে পারেননি। দীর্ঘ জীবনপ্রবাহে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে তিনি তেমন একটা জড়াননি। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পিরিয়ডের উত্তপ্ত রাজনৈতিক সময়ে নিভৃতচারী বিএ কামাল খুব সমঝদার লোক হওয়া স্বত্ত্বেও নিজেকে প্রবলভাবে গুটিয়ে রেখেছিলেন। তারপরও গুঞ্জন আছে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুসলিম লীগের প্রতি ওনার কিঞ্চিৎ সফট্ কর্নার ছিলো। কিন্তু সেটা অতোটা দৃশ্যমান ছিলো না। ইসলামি ভাবাদর্শের প্রতি অকাট্য বিশ্বাস, অনুরাগ ও নিখাদ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হওয়ার কারণে এমনটি কতক লোকের কাছে ধারণা জন্মেছিলো। একারণে যুদ্ধোত্তর সময়ে অনেকের কাছে তিনি বিরাগভাজনও হয়েছেন। নিরেট সত্য হলো প্রজ্ঞা, সমাজমনস্ক ধ্যানের কারণে ওনি সর্বমহলের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে ‘নাফ সূর্যসিঁড়ি’ নামের একটি ক্লাব তাঁকে গুণীজন সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন। এর বাইরে সামগ্রিক অর্থে ওনার বিশাল কর্মযজ্ঞ অবমূল্যায়িতই রয়ে গেছে। প্রকৃত অর্থে পরিতাপের বিষয় হলো, গুণীজনদের কদর করবার প্রতি কার্পণ্য করাটা আমাদের সংস্কৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। তিন তিনটে স্কুল প্রতিষ্ঠায় যাঁর অবদান সর্বাগ্রে, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সাফল্যের চূড়ায় ওঠে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। তারাও তো কখনো বিএ কামালকে সেই অর্থে স্মরণ করেছে বলে আমার মনে হয় না। স্কুলগুলোতে কতো বড়বড় ভবনকোটা নির্মাণ হচ্ছে, চাইলে তো একটি ভবনের নাম বিএ কামালের নামে নামাঙ্কিত করে প্রজন্মের সামনে ছাপা হরফে হলেও তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেতো। অন্তত নামটির উপর চোখ বুলিয়েও পরবর্তী প্রজন্ম আনমনে বা খেলাচ্ছলে জানবার চেষ্টা করতো কে সে বিএ কামাল।

বি: দ্র: -বিএ কামাল এর কোন ছবি পাওয়া যায় নাই । যদি কারো সংগ্রহে থাকে প্রদানের অনুরোধ রইল।


এহ্সান উদ্দিন ,প্রভাষক, কক্সবাজার সিটি কলেজ।