হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
হে ফুলকলিরা!
প্রতিদিন প্রাত সকালে তোমরা প্রস্ফুটিত হতে নবভী উদ্যানে। তোমাদের সুবাসে সুবাসিত হয়ে উঠতো দারুল কুরআন নামক ইলমী বাগিচা। তোমাদের পবিত্রতামুখর সৌরভ ছড়িয়ে যেতো গ্রামের পত্র-পল্লবে।
আজ বহুদিন ধরে তোমাদের প্রস্ফুটিত হওয়ার পথ রূদ্ধ হয়ে আছে। দারুল কুরআন দীর্ঘ তিন মাসেরও অধিক সময় তোমাদের সুবাস থেকে বঞ্চিত। গ্রামের পত্র-পল্লবেও তোমাদের সৌরভ আগের মত আর ছড়িয়ে পড়ছেনা অনেক দিন হয়ে গেলো। ফলে সর্বত্রই আজ বিষণ্ণতার কালোমেঘ ছেয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় মনটা আর মানতে চাইছেনা তোমাদের অনুপস্থিতি। তোমাদের সুবাস পেতে মনটা এখন আনচান করছে।

হে কুরআনের পাখিরা!
তোমরা প্রতিদিন ভোরবিহানে দলে দলে কুরআন বুকে ছুটে আসতে তোমাদের প্রিয় ইলমী বাগিচায় । তোমাদের পদাচরণায় মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের প্রতিটি অলি-গলি ও সড়ক। তোমাদের কলতানে দারুল কুরআনের ক্যানভাস জুড়ে বিরাজ করতো নির্মল আনন্দামেজ।
আজ বহুদিন ধরে প্রিয় ইলমী কাননে তোমাদের আর আসা হয়না। গ্রামের অলি-গলিও আজ তোমাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেনা।।
তোমাদের মত নিষ্পাপ কুরআনের পাখিদের অনুপস্থিতিতে দারুল কুরআনের পুরো ক্যানভাস আজ নিরব, নিস্তব্ধ। নেই কোন কোলাহল, নেই কোন আনন্দের আমেজ।তোমাদের বিরহকাতরতায় দারুল কুরআনের প্রতিটি শ্রেণী কক্ষ যেন নিরবে অশ্রুপাত করছে।

হে প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা!
প্রতিদিন তোমাদের নিষ্পাপ কন্ঠে তিলাওয়াতে কুরআনের সুমধুর ধ্বনিতে পুরো এলাকাজুড়েই ছড়িয়ে পড়তো ঈমানী চেতনার নির্মল আবহ। তোমাদের কোমল কন্ঠে রাসুলে কারীম স. এর হাদীসে পাঠে শীতল হতো আমাদের হৃদয়। কালেমা, মাসায়েলসহ ইসলামের বুনিয়াদী বিষয়াবলী এবং প্রয়োজনীয় অপরাপর বিষয়েও শিক্ষাকার্যক্রমে সারাদিন তোমাদের নিয়ে দারুল কুরআন ক্যানভাস থাকতো প্রাণবন্ত।
কিন্তু আজ কতদিন হয়ে গেলো তোমাদের মধুর কন্ঠে তিলাওয়াতে কুরআন শুনা থেকে আমরা মাহরুম! তোমাদের মত কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কন্ঠে পবিত্র হাদীস শরীফ শুনা হচ্ছেনা আজ কতদিন! আজ সুদীর্ঘ তিন মাসেরও বেশী সময় ধরে তোমাদের অনুপস্থিতিতে পুরো প্রতিষ্ঠান নিষ্প্রাণ।

হে কচিকাঁচা ছাত্র-ছাত্রীরা!
তোমাদের প্রিয় ইলমী বাগিচার পরিচর্যায় নিবেদিত, তোমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষকমণ্ডলী দীর্ঘদিন যাবৎ ভীষণ বিরহকাতরতায় দিনাতিপাত করছেন। তোমাদের অনুপস্থিতি যেন আসাতিযায়েকেরামের মনে নিজেদের সন্তান হারানোর মত বেদনার ঝড় বয়ে দিচ্ছে। আমরা প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত তোমাদের আগমনের প্রতিক্ষার প্রহর গুনছি। তোমাদের পথপানে চেয়ে আছি হে প্রাণের শিক্ষার্থীরা।

হে ছোট্টমণিরা!
তোমাদের কোন দোষ নেই। তোমরা নিষ্পাপ। তোমরা তো বেহেশতের প্রজাপতি। তোমরা তো নবভী উদ্যানের পুষ্পকলি। তোমরা তো ইলমী আকাশের উড়ন্ত পাখি। তোমরা তো ইলমী বাগিচার মৌমাছি। তোমাদের কারণে নয়; আমরা বড়দের পাপের কারণেই আজ তোমাদের মত নিষ্কলুষ পুষ্পরাজিরাও প্রস্ফুটিত হতে পারছেো না! এ জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত, ক্ষমাপ্রার্থী।

হে আলোর পথযাত্রী ছোট্ট বন্ধুরা!
তোমরা হতাশ হয়োনা। ইনশাআল্লাহ সে দিন বেশি দূরে নয় যেদিন আবারো তোমাদের ইলমী বাগিচা তোমাদের পেয়ে সজীব হয়ে উঠবে। আবারো তোমাদের মধুর কন্ঠে তিলাওয়াতে কুরআনের সূরে গ্রামজুড়ে ঈমানী আবহ ছড়িয়ে পড়বে। তোমাদের নিষ্পাপ কন্ঠে হাদীস শরীফ পরিবেশনে আমাদের বিষন্ন হৃদয় শীতল হয়ে উঠবে। আবারো তোমাদের পদচারণায় আমাদের গ্রামের পুরো গ্রামের প্রতিটি সড়ক, অলি-গলি মুখরিত হয়ে উঠবে।
তবে এ জন্য তোমাদেরকে নিষ্পাপ দু”টি হাত উঁচু করে প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাতে হবে আল্লাহ যেন আমাদেরকে করোনাভাইরাস নামক এ মহাদূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন, আমাদেরকে যেন আল্লাহ সকল পাপাচার -অনাচার থেকে হিফাজত করেন। তোমাদেরকে দু’আ করতে হবে আল্লাহর দরবারে আল্লাহ যেন আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর আলোয় নিজেদের আলোকিত করার তাওফিক দান করেন।

হে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীরা!
সেই সুদিন ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা নিজ নিজ ঘরে মনযোগ সহকারে মা-বাবার সার্বিক তত্ত্বাবধানে পড়া-লেখা করো। কুরআন তিলাওয়াত করো। হাদীস শরীফ ও কালেমা-মাসায়েলসহ পঠিত অধ্যায়গুলো বারবার পড়ো। আর প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামায পড়ে দু’হাত তুলে দু’আ করো। আল্লাহ যেন পুরো বিশ্বকে সুস্থ করে দেন।
আমরাও মনখুলে দু’আ করি আল্লাহ যেন তোমাদের আলোকিত পরিচালিত হওয়ার পথ অবারিত করে দেন। আমিন।

তোমাদের দু’আ কামনায়-
হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর
পরিচালক
দারুল কুরআন নূরানী একাডেমী
লম্বরীপাড়া, রামু।
২৩-০৬-২০২০ইং